জৈনধর্মের মূল শিক্ষা ও তার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো , মহাবীরের জীবনী, চতুর্যাম ও ত্রিরত্ন, দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর, জৈনধর্মের প্রভাব, নবম শ্রেণি।

(Main teachings and impact of Jainism) জৈনধর্মের মূল শিক্ষা ও তার প্রভাব:-

মহাবীর হলেন ২৪তম অর্থাৎ সর্বশেষ জৈন তীর্থংকর। ২৩তম তীর্থংকর পার্শ্বনাথ-এর নাম জানা গেছে।


                                  


মহাবীরের জীবনীঃ-


৫৪০ খ্রিঃ পূঃ বর্ধমান মহাবীরের জন্ম হয় উত্তর বিহারের। বৈশালীর কুন্দপুর (বাসাড়) গ্রামে এবং ৪৬৮ খ্রিঃ পূঃ বিহারের পাবাপুরীতে মৃত্যু হয়। তাঁর পিতা সিদ্ধার্থ ‘জ্ঞাতৃক গােষ্ঠীর’ নেতা ছিলেন এবং মাতা লিচ্ছবিরাজ চেতকের ভগ্নী ত্রিশলাদেবী। বর্ধমানের যশােদা নামে এক ক্ষত্রিয় রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ হয় এবং  আনজ্জা বা প্রিয়দর্শনা নামে এক কন্যাসন্তান জন্মলাভ করেন।তিনি ত্রিশ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেন।

দিব্যজ্ঞানঃ-


মােট ১২ বছর নানা স্থানে কঠিন তপশ্চর্যার মাধ্যমে দিব্যজ্ঞান লাভ করে তিনি।‘কৈবল্য বা সর্বজ্ঞ’, তারপর ‘জিন’ বা 'জিতেন্দ্রিয়' বা ষড়রিপু বিজেতা ও সবশেষে ‘মহাবীর’ হন। আনুমানিক ৪৬৮ খ্রিঃ পূঃ বিহারের রাজগিরের পাবাপুরীতে ৭২ বছর বয়সে অনশনে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন।


ধর্মমতঃ-


মহাবীর পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত চতুর্যামের নীতিগুলি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলি হল—

(১) অহিংসা,

(২) অচৌর্য,

(৩) অপরিগ্রহ বা কোনাে বস্তুর প্রতি মায়া বা আসক্তি না রাখা এবং

(৪) সত্যবাদিতা বা মিথ্যা কথা না বলা। 

চতুর্যাম ও ত্রিরত্নঃ- 


এই চতুর্যামের সঙ্গে তিনি ব্ৰত্মচর্য’এর আদর্শ যক্ত করে মােট পাঁচটি উপদেশ তার শিষ্যদের পালনের কথা বলেন। একেই বলে ‘পঞ্চ মহাব্রত’। বেদ, ঈশ্বর, ধর্মীয় রীতিনীতি ও যাগযজ্ঞে তাঁর বিশ্বাস ছিল না। অহিংসা, অনশন ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব তাঁর ধর্মনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহাবীর ও তার অনুগামীরা কর্মফলবাদ জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী সৎ জ্ঞান, সৎ আচরণ সৎ বিশ্বাসই একমাত্র পথ। এই তিনটি নীতিকে বলে “ত্রিরত্ন’ আবার এই ত্রিরতকে বলা হয় ‘সিদ্ধশিল’কারণ এর দ্বারা মানুষ পরম আনন্দ লাভ করতে পারে বা আত্মার মুক্তি আসে। 

দিগম্বর ও শ্বেতাম্বরঃ-


সর্বপ্রাণবাদ’ জৈনধর্মের আর একটি বৈশিষ্ট্য। তাই ইট, কাঠ, পাহাড়, পর্বত, নদনদী প্রভৃতির মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে এবং ক্ষুদ্রতম কীটপতঙ্গ হত্যা মহাপাপ। তাই একবস্ত্রে দীর্ঘ বারাে বছর তপস্যা করে সিদ্ধিলাভের পর তিনি বাকি ত্রিশ বছর বিবস্ত্র থেকেছিলেন। মহাবীর বলতেন, অপরিগ্রহ অর্থাৎ প্রয়ােজনের বেশি সম্পত্তি যেন না রাখা হয়। অমিতব্যয়িতা পবিত্রতা রক্ষা মানবজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। পার্শ্বনাথ শ্বেতবস্ত্র পরিধানের অর্থাৎ ‘শ্বেতাম্বর’-এর কথা বললেও মহাবীর বিবস্ত্র থাকার অর্থাৎ ‘দিগম্বর’-এর কথা বলেছিলেন।


জৈনধর্মের প্রভাবঃ-


ভারত ইতিহাসের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়। জীবনে জৈনধর্মের প্রভাব অপরিসীম।


প্রথমত, জৈনরাই প্রথম বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে সার্থক প্রতিবাদ গড়ে তুলে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায়

উৎসাহ দেখিয়েছিলেন।


দ্বিতীয়ত, ভারতে প্রথম এই জৈনরাই অহিংসার আদর্শ প্রচার করেছিলেন। বৈদিক ধর্মের আড়ম্বর অপেক্ষা আত্মার উৎকর্ষসাধনের উপর জোর দিয়েছিলেন।


তৃতীয়ত, আধুনিক পণ্ডিতদের মতে খ্রিঃ পূঃ ২০০ অব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পাঁচশাে বছর ছিল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের। উত্থানের যুগ। এই অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পিছনে জৈনধর্মের অবদান অসীম।


চতুর্থত, জৈনরা উচ্চবর্ণের সংস্কৃত ভাষা অপেক্ষা সাধারণ মানুষের কথ্যভাষা প্রাকৃত ও অর্ধমাগধী ভাষায় ধর্মপ্রচার করায় তামিল, তেলুগু, কানাড়ি, গুজরাটি প্রভৃতি ভাষাও সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছিল।


পঞ্চমত, ভারতের স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় জৈনদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ওড়িশার খণ্ডগিরি উদয়গিরি পাহাড়ের জৈন গুহামন্দির, জুনাগড় ইলােরার জৈনমন্দির, রাজস্থানের আবু পাহাড়ের জৈনমন্দির এবং কাগজের উপর প্রথম চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি ইত্যাদি।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ