প্রথম রাজ রাজ ও প্রথম রাজেন্দ্র চোলের কৃতিত্ব বর্ণনা করো । নবম শ্রেণী
চোলবংশ :-
পল্লব-পাণ্ড্য বিবাদের সুযােগে খ্রিস্টীয় শতকের মধ্যভাগে বিজয়ালয় পল্লবদের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। ৮৫০ খ্রিঃ পাণ্ড্যদের কাছ থেকে তাঞ্জোর দখল করে বিজয়ালয় এখানে রাজধানী স্থাপন করেন। বিজয়ালয়ের পুত্র প্রথম আদিত্য পশ্চিমে গঙ্গদের পরাস্ত করে কঙ্কু বা সালেম প্রদেশ লাভ করেন। তাঁর সামন্তপ্রভু পল্লবরাজ অপরাজিত বর্মনকে শ্রীপুরামবিয়ামের যুদ্ধে পাণ্ড্যদের বিরুদ্ধে সাহায্য করলেও পরে প্রথম আদিত্য পল্লব বংশের শেষ রাজা অপরাজিত বর্মনকে পরাজিত ও নিহত করেন। প্রথম আদিত্যের পুত্র প্রথম পরান্তক পাণ্ড্যরাজ রাজসিংহ ও সিংহলরাজকে পরাস্ত করে। মাদুরাই ও পাণ্ড রাজ্যের অংশবিশেষ দখল করেন। রাষ্ট্রকুটরাজ তৃতীয় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে তাক্কোলামের যুদ্ধে’ (৯৪৯ খ্রিঃ) পরান্তকের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজাদিত্য নিহত হন।
সুন্দর চোলের পুত্র প্রথম রাজরাজ চোলদের লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধার করে একটি বিশাল চোল সাম্রাজ্য গড়ে তােলেন তাঞ্জোরলিপি থেকে তাঁর বিজয়কাহিনি জানা যায়। রাজরাজের শক্তিশালী নৌবহর ছিল। ত্রিবান্দ্রমের যুদ্ধে কেরলরা রবিবর্মাকে পরাস্ত করে কেরল ও কুইলন লাভ করেন। মহিশূরের' গঙ্গারাজারা ও বেঙ্গির বিমলাদিত্য রাজরাজের কাছে পরাস্ত হন । বিমলাদিত্যের সঙ্গে রাজরাজ নিজ কন্যা কুন্দভাকের বিবাহ দেন। এছাড়া আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের বহ দ্বীপ তিনি অধিকার করেছিলেন। লাক্ষাদ্বীপ, মালদ্বীপ বা প্রাচীন সমুদ্রের ১২,০০০ দ্বীপ’ অঞ্চল জয় করে এক বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছিলেন।
প্রথম রাজেন্দ্ৰ চোল (১০১৪-১০৪৪ খ্রিঃ) ও তাঁর সামুদ্রিক কার্যাবলিঃ-
প্রথম রাজরাজের পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোলদেব চোলবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন। তিনি তাঁর পিতার চেয়ে আরও শক্তিশালী নৌবহর গঠন করেন এবং সামরিক নেন। ‘তিরুমালাই পর্বতলিপি’ ও ‘তাঞ্জোরলিপি’ থেকে রাজেন্দ্র চোলের সামগ্রিক তের পরিচয় পাওয়া যায়। চালুক্য, চের ও পাণ্ড্যদের তিনি দমন করে বাংলা অভিযানে বের হন। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিপাল, পূর্ববঙ্গের গােবিন্দচন্দ্র ও দক্ষিণবঙ্গের রণশূরকে পরাস্ত করে বাংলা অভিযান সফল করেছিলেন বলে তিরুমালাই লিপি থেকে জানা যায়। তাঁর বাংলা অভিযানকে স্মরণীয় করতে ‘গঙ্গইকোণ্ড চোল’ উপাধি নেন এবং ‘গঙ্গইকো-চোপরম’ নামে নতুন রাজধানী নির্মাণ ও ১৬ মাইল লম্বা ‘চোলগঙ্গ হদ’ খনন করেন। রাজেন্দ্র চোলের নৌবাহিনীর আধিপত্যে বঙ্গোপসাগর ‘চোল হ্রদে’ পরিণত হয়েছিল। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, মালয় উপদ্বীপ ও ব্রহ্লাদেশের কিছু অংশ তিনি জয় করেছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়, সুমাত্রা প্রভৃতি দ্বীপের শৈলেন্দ্রবংশীয় রাজা শ্রীবিজয়ের রাজধানী কডেরম্ অধিকার করে রাজেন্দ্র চোল ওই অঞ্চলকে করদরাজ্যে পরিণত করেন। ঐতিহাসিক কে. এম. পানিক্কর (Panikkar) বলেন, “ভারতে একমাত্র চোল সাম্রাজ্যের উদ্যোগে সামুদ্রিক শক্তির যথার্থ বিকাশ ঘটেছিল।”
*প্রথম রাজেন্দ্র চোলের পুত্র প্রথম রাজাধিরাজ কেরল, সিংহল ও পাণ্ড্যরাজ্যের বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। রাজাধিরাজের দুই পুত্র—দ্বিতীয় রাজেন্দ্র চোল (১০৫২-১০৬৪ খ্রিঃ) এবং বীররাজেন্দ্র (১০৬৪-১০৭০ খ্রিঃ) চালুক্য আক্রমণ থেকে চোল সাম্রাজ্যকে রক্ষা করেছিলেন। বীররাজেন্দ্র বেঙ্গির চালুক্য, চের ও পাণ্ড্যদের আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন। সংগঠন ছাড়াও সাহিত্য, শিল্প ও ভাষার ক্ষেত্রে চরম উন্নতি শুরু হয়েছিল চোলযুগে।
0 মন্তব্যসমূহ