সামন্ত প্রথা কাকে বলে ?, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে সামন্তপ্রথার তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ?

সামন্তপ্রথা (ভারতীয় বৈশিষ্ট্যসহ) (Feudal System):-


ঐতিহাসিক ড. আর. এস. শর্মা, ড. ডি. ডি. কোশাম্বী, ড. ডি. সি. সরকার, ইরফান হাবিব, ড. বি. এন. এস. যাদব প্রমুখ মনে করেন গুপ্তযুগের অনেক আগে থেকেই সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। হরবন্স মুখিয়া, নােবরুকার্শিমা ও দীনেশচন্দ্র সরকার এই তত্ত্ব গ্রহণ করেননি। তবে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর (৬৪৭ খ্রিঃ) কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দুর্বলতার সুযােগে সামন্ত কর্মচারীরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। 


সামন্ত প্রথা কাকে বলে ?, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে সামন্তপ্রথার তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো


ভূস্বামীদের প্রাধান্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ-

বৈশিষ্ট্য—

()) শক্তিশালী শাসকের সময় সামন্ত কর্মচারীরা বেতন হিসাবে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা সমৃদ্ধ গ্রাম অধিকার করতেন। 

() রাজার অধীনস্থ সেনাপ্রধান, অনুচর, স্থানীয় শাসনকর্তা একইভাবে জমি ভােগদখল করতেন। একসময় ভূমির উপর এই অধিকার বংশানুক্রমিক হয়ে ওঠে। 

() রাজার পরিবর্তে ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুরা এলাকার সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠে। 

() দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত অবশ্য শাসন পরিচালনার জন্য বহু সামন্তপ্রধান নিয়ােগ করেছিলেন। 

() হননেতা তােরমান ও মিহিরকুল অথবা পুষ্যমিত্রের আক্রমণকালে সামন্তদের প্রতিপত্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।

এইসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মধ্যে ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুদের স্বেচ্ছাচার ও একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে ওঠে। অন্যদিকে দাস শ্রমিক কৃষকদের অবস্থা শােচনীয় হতে থাকে। অধ্যাপিকা রােমিলা থাপার বলেন, “কৃষকদের জীবনে কোনাে আশার  আলাে ছিল না।” তাই বাঁচার জন্য এদের অনেকেই দস্যুবৃত্তি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়।

সামন্তপ্রথা গড়ে ওঠার কারণসমূহঃ-

কৃষি অর্থনীতির প্রাধান্যের জন্য গুপ্তযুগে সামন্তপ্রথার সূত্রপাত হয় বলে রামশরণ শর্মা মনে করেন। তিনি বলেন ব্রাত্মণ-পুরােহিত ও মন্দিরকে দান করা জমির ভিত্তিতে সামন্তপ্রথা গড়ে ওঠে। তাঁর যুক্তি হল :----

() চাষযােগ্য জমি নিয়মিত ব্রাত্মণ ও অন্য ধর্মপ্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হত। 

() ‘দেবদান’ বা ব্ৰত্মদেয় বা ব্রাত্মণদের দান করা জমিতে অস্থায়ী রায়তরা কৃষিকাজ করত। 

() পুরােহিত তাঁর জমি থেকে রাজাকে কর দিত না। ফলে পুরােহিত ও রায়তের মাঝে ওঠে মধ্যস্বত্বভােগী শ্রেণি।

() ভূস্বামীরা পুরানাে জমিদারদের উৎখাত করে ভূমিদাস নিয়ােগ করে তাদের বেগার খাটাতেন ও বাড়তি কর দিতে বাধ্য করতেন।

() কিছু আ৯ কৃষক রাজার সৈন্যদের দ্বারা কখনও বা সর্বস্বান্ত হত। 

() কৃষিজমি ক্রমাগত খনি হয়েছিল। শূদ্ররা তাতে ভাগচাষির কাজ করত। 

() ‘অগ্রহার’ বা ব্রাক্ষ্মণদের দান করা নিষ্কর জমি বা গ্রামে স্বয়ম্ভর অর্থনীতি গড়ে ওঠে কৃষক ও শিল্পী-কারিগরদের উপর ভিত্তি করে রণবীর চক্রবর্তীর মতে খ্রিস্টীয় ৬৫০-১২০০ অব্দের মধ্যে ‘অগ্রহার প্রথা’ সর্বভারতীয় রুপ নেয়। 

() মুদ্রার অপ্রতুলতার কারণে অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যে অবনতির ফলে উৎপাদন এ বণ্টননীতি আঞ্চলিক হয়ে পড়ে। এইসব কারণে গুপ্তযুগে সামন্তপ্রথা গড়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযােগে নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী ও সদাশিব আলতেকারের মতে দক্ষিণ ভারতে। হেমচন্দ্র রায়চৌধুরির মতে উত্তর ভারতে আঞ্চলিক সামন্তশক্তির উত্থান ঘটে।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ