রাজনৈতিক আধিপত্য লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Conflict for Political Domination):-
৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর কনৌজের সিংহাসনের উপর আধিপত্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, তাকে ‘ত্রিপাক্ষিক দ্বন্দ্ব’ বা ‘ত্রিশক্তির সংগ্রাম’ (Tripartite Struggle) বলে।
ত্রিশক্তির দ্বন্দ্বের কারণঃ-
হর্ষের মৃত্যুর পর উত্তর ভারতের রাজনৈতিক শূন্যতা (Political vacuum) ঢাকতে পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট শক্তির সক্রিয় ভূমিকালাভের পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল।--
প্রথমত, হর্ষবর্ধনের সময় কনৌজকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তার একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার জন্য পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটশক্তি দ্বন্দ্বে মেতে ওঠে।
দ্বিতীয়ত, হর্ষের মতাে মানমর্যাদা প্রতিষ্ঠার আশায় পারস্পরিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
তৃতীয়ত, এখানকার উর্বর বিস্তীর্ণ গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের বাসনা দ্বন্দ্বের আর একটি কারণ।
চতুর্থত, কনৌজ একটি বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। এর সংলগ্ন এলাকাগুলিও বেশ সমৃদ্ধিশালী।
ফলাফল ও গুরুত্বঃ-
প্রায় দুশাে বছর ধরে ত্রিশক্তির দ্বন্দ্ব চলেছিল। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এত দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব খুব কম। এই দ্বন্দ্বের ফলাফল বিচারে গুরুত্বও অনেক বেশি।
প্রথমত, এই দীর্ঘ দ্বন্দ্বে তিনটি পক্ষের প্রত্যেকের যুদ্ধজনিত কারণে প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলতে থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলির প্রত্যেকের সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই সুযােগে তুর্কিরা অনায়াসে ভারত আক্রমণ করতে পেরেছিল।
তৃতীয়ত, ত্রিশক্তির দ্বন্দ্বের ফলে রাষ্ট্রীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। ফলে দ্বন্দ্বওর যুগের ভারতের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়াল ক্ষুদ্র আঞ্চলিকতাবাদের উত্থান। তাই খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের শেষার্ধ থেকে খ্রীস্টীয় শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত যে ত্রিশক্তির দ্বন্দ্ব চলেছিল, তাকে কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক ইতিহাসের ‘ব্যর্থ সংগ্রাম’ বলেছেন। কারণ কেউ এর দ্বারা লাভবান হয়নি। ৯১৬ , রাষ্ট্রকুট সাফল্যে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।
0 মন্তব্যসমূহ