জাতিভেদ প্রথা কী ? কিভাবে প্রথার উৎপত্তি ? সমাজে এই প্রথার প্রভাব কিরূপ ছিল ? নবম শ্রেণী
জাতিপ্রথা (Caste System):-
প্রাচীন যুগ তথা হিন্দুযুগের শেষ ৫০০ বছর জাতিভেদ প্রথা অত্যন্ত কঠোর রূপ নেয়। ব্রাত্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—এই চার বর্ণের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। রঘুনন্দন, ভবভূতি, বিজ্ঞানেশ্বর প্রমুখ শাস্ত্রকারগণ সামাজিক বিধিবিধান ও রীতিনীতি নির্ধারণ করেছিলেন। ব্রাত্মণ ও ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় সামাজিক মানমর্যাদা ভােগ করলেও বৈশ্য ও শূদ্ররা চরম সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। শূদ্র ও চণ্ডালরা অস্পৃশ্য ও ঘৃণ্য ছিল। শূদ্রের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ ছিল। চণ্ডালের ছায়া স্পর্শে ব্রাত্মাণের প্রায়শ্চিত্তের বিধান ছিল। মনু একস্থানে বলেছেন “চণ্ডলরা পঞ্চমবর্ণ তাই লােকালয়ের বাইরে থাকবে, শবের পােশাক পরবে, মাটির পাত্র ব্যবহার। করবে, লােহার অলংকার পরিধান করবে এবং গর্ধভকে পােষ মানাবে।”
জাতিভেদ প্রথা
ঐতিহাসিকপি.ভি.কানের (Kane) মতে, এই পঞ্চমবর্ণের চণ্ডলরাই বর্তমানকালের ‘হরিজন’ সম্প্রদায়। সুতরাং কঠোর বর্ণপ্রথা এই সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। আরবীয় পণ্ডিত অলবেরুনি তাঁর ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ গ্রন্থে একাদশ শতকের ভারতের হিন্দু সমাজের এই। সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামির বিবরণও লিখে গেছেন। বর্ণপ্রথার কঠোরতা থাকলেও ব্রাত্মণ-ক্ষত্রিয় ও অন্যান্য বর্ণের মধ্যে মিশ্রণ ঘটেছিল। এই সমাজে অসবর্ণ বিবাহকে ভালাে চোখে দেখা। হত না ঠিক, তথাপি বর্ণসংকর ঘটেছিল। এর থেকেই সৃষ্টি হয় বিভিন্ন উপবর্ণের (Subcaste)।
আবার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ পেশার থেকে বিভিন্ন উপবর্ণের উদ্ভব ঘটে, যেমন কুম্ভকার, স্বর্ণকার, তন্তুবায়, চর্মকার, কর্মকার, শঙ্খবণিক, মালাকার, তেলি, রাজপুত্র ক্ষত্রিয়, মল্লক্ষত্রিয়, বৰ্গক্ষত্রিয়, পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় ইত্যাদি পেশাভিত্তিক উপবর্ণ। ব্রাত্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র প্রভৃতি বর্ণের যেসব মানুষ রাজকর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন, তারাই। একসময় কায়থ’ নামে পরিচিত হন। এদের মধ্যে আবার কুলীন কায়থ, করণ কায়স্থ ইত্যাদি ছিল। দক্ষিণে আলবার, নায়নার, এনাদি (যােদ্ধা), বল্লাল (বেসরকারি কর্মী) ইত্যাদি সম্প্রদায় ছিল। ব্রাত্মণপ্রধান দক্ষিণি সমাজে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের প্রভাব কম ছিল।
0 মন্তব্যসমূহ