প্রাচীন ভারতীয় সমাজে কোন সময় নারী স্বাধীনতার স্বীকৃতি ছিল ? কখন থেকে তা লঙ্ঘিত হতে থাকে ? নারীরা কিভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছিল? অথবা, প্রাচীন বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থান কি ছিল ? পরবর্তী যুগে এই পরিস্থিতির কি পরিবর্তন হয়েছিল ? নবম শ্রেণী


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে কোন সময় নারী স্বাধীনতার স্বীকৃতি ছিল ?  কখন থেকে তা লঙ্ঘিত হতে থাকে ? নারীরা কিভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছিল? 

অথবা,

প্রাচীন বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থান কি ছিল ? পরবর্তী যুগে এই পরিস্থিতির কি পরিবর্তন হয়েছিল ?  নবম শ্রেণী 


নারীদের অবস্থান (Position of Women):-

স্মৃতিশাস্ত্র অনুসারে প্রাচীনকালে নারীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল—’ব্ৰত্মবাদিনী’ (অনুঢ়াশাস্ত্রক) ও ‘সদ্যোদবাহা’ (বিয়ে পর্যন্ত অধ্যয়নরত)। পতঞ্জলি অসিচালনায় দক্ষ নারীদের ‘শাক্তিতীকী’ বলেছেন। কৌটিল্য, মেগাস্থিনিস নারী দেহরক্ষীর কথা বলেছেন। মেগাস্থিনিস বলেছেন পাণ্ড্য রাজারা নারীদের  দ্বারা শাসিত হতেন। তখন পুরুষের মতাে নারীদের উপনয়ন হত। কিন্তু মহর্ষি মনু বলেছেন, নারী চিরকাল পরাধীন। বাল্যে পিতা, যৌবনে স্বামী ও বার্ধক্যে পুত্রের অধীন। ” মনু তাঁ‘মনু সংহিতায়’ লিখেছেন, 'অনুগত স্ত্রী দেবতার দান, তাকে ত্যাগ করা অপরাধ। মনুর মতে, “নারীই গৃহের দীপ্তি”। প্রথম দিকে সমাজে নারীর উচ্চ স্থান ছিল। 


           নারীদের অবস্থান

 উত্তর ভারত অপেক্ষা দক্ষিণ ভারতের নারীদের মর্যাদা বেশিঃ-

এই যুগে পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের কোনাে সামাজিক মর্যাদা ও স্বাধীনতা ছিল না। তাদের পুরুষের দাসানুদাস হয়ে থাকতে হত। অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্যের মতে, নারীপীড়নের নানা পন্থা এই যুগের শাস্ত্রকাররা ধর্মগ্রন্থের বিকৃত ব্যাখ্যায় তুলে ধরেছিলেন। মৎস্যপুরাণে দুষ্ট ভার্যাকে বাঁশ বা দড়ি দিয়ে পেটানাের উল্লেখ আছে, এমনকি তাকে পরিত্যাগের নানা উপদেশও আছে। এই সমাজকাঠামাের মধ্যে নারীর স্বনির্ভরশীল হয়ে ওঠার কোনাে সুযােগই ছিল না। সমাজে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ, পণপ্রথা ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। বিধবাবিবাহ ও স্ত্রীশিক্ষাকে ভালাে চোখে দেখা হত না। বিবাহিতা নারীদের মধ্যে শাঁখা-সিঁদুরের প্রচলন ছিল দক্ষিণ ভারতের সমাজে নারীরা অবশ্য যথেষ্ট সম্মানের অধিকারিণী ছিলেন। বাৎস্যায়ন বলেছেন, “বাংলার মেয়েরা মৃদুভাষিণী, কোমলাঙ্গী ও অনুরাগবতী।” রাষ্ট্রকুট বংশের এক রাজমহিষী শাসন পরিচালনা করেছিলেন।


মন্দিরে নারীদের উৎসর্গ করার রীতিঃ-


প্রাচীন ভারতীয় সমাজের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, দেবদাসী প্রথা। রাজপ্রাসাদে বা মন্দিরে নারীরা ‘যৌন সামগ্রী’ রূপেই প্রদর্শিত হতেন অভিজাত ঘরের অনুঢ়া নৃত্যগীতে পটিয়সী যুবতীদের  বিবাহ না দিয়ে দেবমন্দিরে উৎসর্গ করার নাম হল, ‘দেবদাসী প্রথা’। এই দেবদাসী বা দেবতার সেবাকার্যে নিযুক্ত দাসীদের সম্পর্কে মহাভারত, পুরাণ এমনকি প্রাচীন শিলালিপিতে অনেক কথা বলা আছে। প্রধানত গুজরাট, কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা ও সমগ্র দক্ষিণ - ভারত জুড়ে দেবদাসী প্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। হিউয়েন সাঙ্‌ মুলতানের সূর্যমন্দির, দেবদাসী দেখেছিলেন (৬২৯ খ্রিঃ)। ৮৬৭ খ্রিঃ আবু জইদ আল হাসান নামে এক আরব পর্যটক মন্দিরে দেবদাসী দেখেছিলেন গুজরাটের সােমনাথ মন্দিরে ৫০০ দেবদাসী ছিল।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ