প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্যর মূল ধারাগুলি বর্ণনা করো। ভারতের বহির্বাণিজ্য (External trade of India),ভারত ও মধ্য এশিয়া, ভারত ও তিবৃত, নবম শ্রেণী

প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্যর মূল ধারাগুলি বর্ণনা করো। নবম শ্রেণী


ভারতের বহির্বাণিজ্য (External trade of India):-


প্লিনি ও টলেমির ভূগােল’ এবং এক অজ্ঞাত পরিচিত গ্রিক নাবিকের লেখা ‘পেরিপ্লাস অফ দি ইরিথ্রিয়ান সি’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে প্রাচীন ভারতের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা জানা যায়। সিন্ধুযুগ, আৰ্যযুগ, মৌর্যযুগ, কুষাণযুগ, গুপ্তযুগ, বৌদ্ধযুগে, পাল, চোল, পল্লব প্রভৃতি যুগে এই বাণিজ্য প্রসারিত হয়। ভারতের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বাণিজ্যে স্থলপথ ও জলপথ সমান গুরুত্ব নিয়েছিল। ঐতিহাসিক ম্যাক ত্রিন্ডনস তাঁর ‘Ancient India' গ্রন্থে বলেছেন, প্রাচীন ভারতের দুটি বাণিজ্যপথ দিয়ে বহির্বাণিজ্য হত-- কান্দাহার হয়ে একটি পথ হিরাটের সঙ্গে এবং সুসা, পার্সিপােলিস হয়ে পশ্চিমের সঙ্গে আর একটি বাণিজ্যপথ যুক্ত ছিল।


        প্রাচীন ভারতের বহির্বাণিজ্য


ঐতিহাসিক আর্নেস্ট ম্যাকে বলেন, সিন্ধুসভ্যতার যুগে পশ্চিম এশিয়া, মিশর, উর প্রভৃতি স্থানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। গুজরাটের লােথাল বন্দর দিয়ে সিন্ধুর বণিকরা সমুদ্রবাণিজ্য করত বলে জানা গেছে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে আগাথারসাইডস বলেন সিন্ধুর পােতন বন্দর থেকে আগত ভারতীয় বণিকদের পণ্যদ্রব্যই এডেন বন্দরের সমৃদ্ধির কারণ। পেরিপ্লাসেও একই অভিমত ব্যক্ত হয়েছে। চিনের রেশম ও রেশমজাত বস্ত্র ক্যান্টন বন্দর দিয়ে ভারতের নানা বন্দর মারফত পূর্ব রােমের কনস্টানটিনােপলে রপ্তানি করা হত। মূল্যবান ও কমদামি পাথর এষ ভারত ও পশ্চিমশৌখিন দ্রব্যের রপ্তানিও যথেষ্ট হত। অন্যদিকে রােম তথা পশ্চিম এশিয়া থেকে ভারতে আমদানি হত পারস্য উপসাগরের খেজুর, আরব ও ইতালির সুরা ও সুরা রাখার নানা সাইজের কাচের জার। পশ্চিম উপকূলের বারিগাজা বন্দর দিয়ে এইসব জিনিস ভারতে আনা হত। 


      সাতবাহন রাজারা মুদ্রায় যে সিসার ব্যবহার করতেন তা রােম থেকে আনীত রােমের সঙ্গে বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলেন সাতবাহন ও কুষাণরার চিন থেকে মধ্য এশিয়ার পামির মালভূমি ও পশ্চিম এশিয়া তথা রােম সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত ‘রেশমপথ' (Silk route) ভারতের উত্তর-পশ্চিমে কুষাণ সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রসারিত থাকায় বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক শুল্কের দিক থেকে কুষাণরা লাভবান হয়েছিল। মালাবারের গােলমরিচ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে এই পথে রােমে পাঠানাে হত বলে রােমিলা থাপার গুরুত্বের বিচারে গােলমরিচকে ‘ব্ল্যাক গােল্ড’বলেছেন। ভারতে কুষাণরাই প্রথম স্বর্ণমুদ্রা চালু করেছিল। রােমান সম্রাট ট্রজানের (৯৮-১১২ খ্রিঃ) সময় রােমান বাণিজ্য আফগানিস্তান, উত্তর-পশ্চিম ভারত ও কাবুল থেকে ৭২ কিমি. দূরে বেগ্রামে বিস্তৃত ছিল। হাড্রিয়ান (১১৭-১৩৮), আন্টোর্নিনাস পিয়াস (১৩৮-১৬১), হেলিয়ােগ্যারালাস (২১৮-২২২), কনস্টানটাইন (৩০৭-৩৩৭), জালিয়ান (৩৬১-৩৬৩), ও জাস্টিনিয়ানের (৫৩০-৫৫২) সময় ভারত-রােম বাণিজ্যের বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ঐতিহাসিক জে. বি. প্ৰিলক্স মনে করেন।

ভারত ও মধ্য এশিয়াঃ-

মধ্য এশিয়ার কাশগড়, খােটান, ইয়ারখণ্ড আকসু, সমরখণ্ড, বুখারা, তুরফান, কুচি প্রভৃতি স্থানে ভারতীয় বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণ ঘটেছিল। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক অরেলস্টাইন এর যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। ভারতীয় বণিকরা পণ্যসম্ভার নিয়ে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ব্যাকট্রিয়া হয়ে অক্ষুনদীর অববাহিকা ধরে কাস্পিয়ান সাগরের বিভিন্ন বন্দরে যেত।

ভারত ও চিনঃ-

চিনা পর্যটক চাও কিয়েন বলেন, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে চিনের রেশমবস্ত্র ভারত। হয়ে বহিলক, দেশে রপ্তানি হত। স্থলপথে ভারত-চিন বাণিজ্যের দুটি পথ ছিল— 

() মধ্য এশিয়া, ব্যাকট্রিয়া ও সুলেমান পর্বতমালার গিরিপথ দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে বিস্তৃত পথ এবং 

() কারাকোরাম পর্বত ও কীবের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে চিনের সংযােগরক্ষাকারী বাণিজ্যপথ। ইথিয়ােপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দঃ-পূর্ব এশিয়া, আরব ও সিংহলে চিনা বাণিজ্যজাহাজ যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময় থেকে ভূমধ্যসাগরের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যসম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। 

ভারত ও তিবৃতঃ-

তিবৃতের রাজা স্বং স্যান্গ্যাম্পের সময় থেকে বৌদ্ধধর্মের প্রসারের পাশাপাশি ভারত-তিবৃত বাণিজ্য বিস্তৃত হয়। এই যুগের শেঠ্‌ঠী বণিক অনাথপিণ্ড, বহির্বাণিজ্যে নিযুক্ত ছিলেন। স্থলপথে তিবৃতের সঙ্গে এই বাণিজ্যিক সংযােগ ঘটে। ঐতিহাসিক বি. এন. মুখার্জি বলেছেন, বাংলায় ঘােড়া আমদানি হত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দিয়ে। চন্দ্রকেতুগড়ের সিলমােহর থেকে জানা গেছে গন্ধক তাম্রলিপ্ত ও সােনারগাঁও বন্দর দিয়ে বহির্বিশ্বে রপ্তানি হত।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ