হুমায়ুনের কৃতিত্ব বর্ণনা করো | দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের গুরুত্ব, চৌসার যুদ্ধ, বিলগ্রামের যুদ্ধ, মােগল-আফগান দ্বন্দ্ব ও গােগ্‌রার যুদ্ধ (১৫২৯ খ্রিঃ) মােগল আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Foundation of Mughal Empire : Babur-Mughal-Afghan Contest), নবম শ্রেণী

হুমায়ুনের কৃতিত্ব বর্ণনা করো । নবম শ্রেণী

মােগল-আফগান দ্বন্দ্ব ও গােগ্‌রার যুদ্ধ (১৫২৯ খ্রিঃ) মােগল আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Foundation of Mughal Empire : Babur-Mughal-Afghan Contest):-


          হুমায়ুন

হুমায়ুন:-


তারপর ১৫২৯ খ্রিঃ ৬ মে বিহারের শের খাঁ ও জৌনপুরের  মহম্মদ লোদি বাবরের সমস্ত আফগান সর্দারদের।ঐক্যবদ্ধ করলে বাবর বিহারের ঘর্ঘরা বা গােগরা নদীর তীরে আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের পরাস্ত করেন। এই যুদ্ধের মাত্র এক বছর পর ১৫৩০ খ্রিঃ ২৬ ডিসেম্বর। সাতচল্লিশ বছর বয়সে বাবরের মৃত্যু হয়।

হুমায়ুনের রাজত্বকালে আফগানদের সঙ্গে দ্বন্দ্বঃ-

বাবরের মৃত্যুর পর তার চার পুত্র হুমায়ন, কামরান, আসকারি ও হিন্দাল এবং কিছু। আত্মীয়স্বজন সিংহাসন লাভের জন্য বিবাদ শুরু করেন। হুমায়ুনের মা মহম সুলতানা | হুমায়ুনকে সিংহাসনে বসার অনুমতি দেন। হুমায়ুন কথার অর্থ হল সৌভাগ্যবান। কিন্তু হুমায়ুনের রাজত্বকালে (১৫৩০-১৫৩৯ খ্রিঃ) অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযােগে আফগানদের আক্রমণ তার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। মােগল দরবারে অরাজকতার সুযােগে গুজরাটের বাহাদুর শাহ এবং বাংলা ও বিহারের শের খাঁ নামে দুই আফগান নেতা হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। পূর্বপরাজয়ের প্রতিশােধ নিতে অগ্রসর হন। হুমায়ুনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবাই আফগানদের সাহায্য করেছিল। তথাপি যথেষ্ট অনুকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও হুমায়ুন বাহাদুর শাহ ও শের খাঁকে পরাস্ত বা বশ্যতা স্বীকার করাতে পারেননি তার নির্বুদ্ধিতার জন্য। তবে কালির দুর্গ অবরােধ করে রাজা প্রতাপরুদ্রকে আফগানদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখেন। ১৫৩২ খ্রিঃ হুমায়ুন ‘দাদরার যুদ্ধে’ মামুদ। লােদি ও তার অনুগামী আফগানদের পরাস্ত করেছিলেন মাত্র। চুনার দুর্গ অবরােধ করলেও শের খাঁকে দমন করা সম্ভব হয়নি। 

চৌসার যুদ্ধঃ-

হুমায়ুন যখন বাংলাদেশে তখন আফগান নেতা শের খাঁ বা শেরশাহ দিল্লি ও আগ্রা আক্রমণ করে রাজধানী বিপন্ন করে তােলেন ফলে হুমায়ুন বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বক্সারের কাছে চৌসার যুদ্ধে (১৫৩৯  খ্রিঃ) শের খার বাহিনীর কাছে পরাস্ত হন। আফগান নেতা শের। খা কনৌজ, জৌনপুর, বাংলা ও বিহারের উপর আধিপত্য স্থাপন করেন। নিজের মর্যাদা বদ্ধির জন্য ‘শেরশাহ’ উপাধি নেন ও নিজের নামে ‘খুৎবা’ পাঠ করান।

বিলগ্রামের যুদ্ধঃ-

পরের বছর অর্থাৎ ১৫৪০ খ্রিঃ ক্রুদ্ধ হুমায়ুন আবার শের খাঁর বিরদ্ধে কনৌজ বা ‘বিলগ্রামের’ যুদ্ধে (১৫৪০ খ্রিঃ) শামিল হন। কিন্তু এবার হুমায়ন শােচনীয়ভাবে বিলগ্রামের যুদ্ধ পরাস্ত হয়ে সস্ত্রীক পারস্যে পালিয়ে যান। ফলে খুব সহজেই শেরশাহ দিল্লিতে আফগান সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। এর আগে ‘সুরজগড়ের যুদ্ধে’ (১৫৩৪ খ্রিঃ) তার অধিকাংশ শত্রুকে দমন করেছিলেন।

মােগল-আফগান দ্বন্দ্বের সমাপ্তিঃ-

হুমায়ুনের আকস্মিক মৃত্যুতে (১৫৫৬ খ্রিঃ ২৭ জানুয়ারি) তাঁর পুত্র আকবর ১৫৫৬ খ্রিঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র বারাে বছর বয়সে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ১৫৫৬ খ্রিঃ ৫ নভেম্বর বিশাল মােগল বাহিনীর বিরুদ্ধে হিমু তার |সৈন্যবাহিনী নিয়ে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধে হিমু বীরবিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ শত্রুপক্ষের ছােড়া একটি তির হিমুর চোখে এসে বিধলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। আফগান সেনারা এই ঘটনায় মনােবল হারিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে।

দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের যুদ্ধের গুরুত্বঃ-

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের সবচেয়ে বড়াে গুরত্ব হল :---


(এক) ভারতে আফগান শক্তি চিরতরে বিনাশ হয়। দিল্লি ও আগ্রাতে আবার মােগলদের বিজয়পতাকা উড্ডীন হয়।


(দুই) হিমু হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপনের যে চেষ্টা চালিয়েছিলেন তা সম্পূর্ণ বিফল। হয়। সেদিক থেকে এই যুদ্ধ একটা নতুন যুগের উত্তরণে সাহায্য করেছিল।  


(তিন) ভারতের ইতিহাসে তিন দশক ধরে চলতে থাকা মােগল-আফগান দ্বন্দ্বের চির পরিসমাপ্তি ঘটে এই দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের পর। হিমুর প্রভু আদিল শাহ নূরকে বাংলার সুলতান মহম্মদ শাহ হত্যা করলে আকবর আফগান আক্রমণের | দ্বিতীয় পানিপথের ভয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হন। 


(চার) দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের যুদ্ধের জয়লাভ আকবরের মনােবল ও আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এককথায় এই যুদ্ধ থেকে আকবরের সাফল্যের বিজয়রথ সেই যে ছুটতে শুরু করেছিল, যা তার জীবনের শেষ যুদ্ধ আসিরগড়ের যুদ্ধের (১৬০১ খ্রিঃ) পর থেমেছিল।” 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ