নগর, বাণিজ্য ও বণিকশ্রেণি সম্পর্কে আলোচনা করো (Urban, Trade and Traders), নগরবাণিজ্য,বনিকদের শ্রেনী বিভাজন, নবম শ্রেণি ।

নগর, বাণিজ্য ও বণিকশ্রেণি (Urban, Trade and Traders) :


সিন্ধুর কিছু সিলমােহর থেকে জানা যায় মেসােপটেমিয়ার উস্মা, সুমেরের উর, লাগাস, সুসা প্রভৃতি নগরে সিন্ধুর বণিকরা ব্যাবসা করত।














বনিকদের শ্রেনী বিভাজনঃ-

সিন্ধুর নগরবণিকদের স্বাচ্ছল্য দেখে অনেকে তাদের শাসকশ্রেণিভুক্ত বলেছেন বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগে বৈশ্য ও পূর্ববর্তী ‘পানি’ নামে বণিকশ্রেণি নগর বাণিজ্য সচল রেখেছিল। এইসময় নগর’ ও নগরিন’ (নগরবাসী) শব্দ প্রচলিত ছিল। কৌশাম্বী, কোশল, বিদর্ভ, অহিচ্ছত্র ও হস্তিনাপুর নগরে বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। নগরবাণিজ্যে কৃষ্ণল, শতমান, মনা ও নিষ্ক নামে মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম ছিল। বাণিজ’ নামে বণিকশ্রেণি তখন গড়ে উঠেছিল। এদের বণিকসংঘের নাম ‘গণ’, এর সভাপতিকে বলে ‘শ্রেষ্ঠিন’। তখন শত ‘অনিত্র’ নামে একশত দাঁড়বিশিষ্ট নৌকার দ্বারা বণিকরা ব্যাবিলন শহরে বাণিজ্য করেছিল। বৌদ্ধযুগে অনাথপিণ্ডদ শ্রেষ্ঠিন ছিলেন। বৌদ্ধসাহিত্যে ‘গিল্ড’কে ‘শ্রেণি' বা ‘পূগ’বলা হত। এর সভাপতিকে ‘জ্যেষ্ঠক’ বা শ্রেষ্ঠিন, মহাশ্রেষ্ঠিন বা অনুশ্রেষ্ঠিন বলা হত। বৌদ্ধ জাতক থেকে জানা যায় ৫০০ শকটে পণ্যদ্রব্য নিয়ে সার্থবাহরা বাণিজ্য করত। এরা ভাম্যমাণ বণিক ছিলেন। পাণিনি ‘গাে-বণিজ’ ও ‘অশ্ববণিজ’দের নাম উল্লেখ করেছেন।

নগরবাণিজ্যঃ-

বারাণসী, শ্রাবস্তী, তক্ষশিলা, রাজগৃহ হয়ে গােদাবরী নদীর তীর কিংবা রাজপুতানার মরুভূমি দিয়ে সিন্ধুনদীর উপত্যকাও নর্মদার মােহানা পর্যন্ত বাণিজ্যপথ বিস্তত ছিল। নগরবাণিজ্যের কারণ--

(ক) বণিক ও কারিগরদের নগরে দলবদ্ধভাবে বাস,

(খ) বণিক ও কারিগর সংঘ গঠন,

(গ) শহরগুলি নদীর তীরে অবস্থিত,

(ঘ) বাণিজ পথ নির্মাণ,

(ঙ) মুদ্রার ব্যাপক ব্যবহার,

(চ) ‘সুলভসূত্র অনুসারে জমির সীমা নির্দিষ্ট হয় যা এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল। তখন তাম্রমুদ্রা ‘কার্যাপণ’ (১৪৬ গ্রেন ওজন), রৌপ্যমুদ্র। ‘ধরন’ ‘পুরাণ’ (৫৮ গ্রেন ওজন) চালু ছিল। আশি কোটি (মুদ্রা) আছে এমন শ্রেষ্ঠ বণিক তখনও ছিল। 

        মৌর্যযুগে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রয়ােজনে নগর গঠিত হয়, সমাজে। বণিকরা বিশেষ শ্রেণি বলে গণ্য হত। ‘পৌতবাধ্যক্ষ’ নামে কর্মচারীরা লক্ষ রাখত ব্যবসায়ীর ঠিকমতাে জিনিসের ওজন দিচ্ছে কিনা। তখন রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যপণ্যকে বলা হত ‘রাজপণ্য’, ‘পণ্যাধ্যক্ষ’, ‘শুলকাধ্যক্ষ’, ‘নাবাধ্যক্ষ’ প্রভৃতি কর্মচারীও ছিল। মৌর্যোত্তর যুগের বাণিজ সম্পর্কে জানতে ‘পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সি' গ্রন্থটি বিশেষভাবে সাহায্য করে ভারহূত, সাঁচি, নাসিক, জন্নার ও কার্লে গুম্ফালেখ থেকে জানা যায় যবন বণিকরা তখন। নগরবাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছিল। ভারত-রােম বাণিজ্য তখন খ্যাতিলাভ করেছিল। উজ্জয়িনী, বারিগাজা, বারবারিকাম, সােপরা, কল্যাণ, মুজিরিস অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। 


নগরবাণিজ্যের প্রভাবে—

(ক) বণিকদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ে,

(খ) প্রাধান্যের প্রশ্নে ব্রাত্মণবৈশ্য কিবাদ বাধে,

(গ) নগর ও নগরবাণিজ্য উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পায়।








একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ