প্রাচীন ভারতের রাজ শক্তির উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর। এবং ষোড়শ মহাজনপদ সম্পর্কে যা জানো লেখো।রাজশক্তির উত্থান (বৈদিক যুগের শেষদিকে উপজাতি গােষ্ঠীর সংঘাত) ও যুদ্ধবিগ্রহ [Emergence of Kingly Power (Conflict among classes) and War],রাজশক্তির উত্থান—ষােড়শ মহাজনপদ(Emergence of Kingship powerSixteen Janapadas), নবম শ্রেণী

প্রাচীন ভারতের  রাজ শক্তির উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।
ষোড়শ মহাজনপদ সম্পর্কে যা জানো লেখো:-

রাজশক্তির উত্থান (বৈদিক যুগের শেষদিকে উপজাতি গােষ্ঠীর সংঘাত) ও যুদ্ধবিগ্রহ [Emergence of Kingly  Power (Conflict among classes) and War]: 

রাজশক্তির উৎপত্তির পিছনে ‘দৈব মতবাদ’ (Divine Right Theory) বিশেষ উল্লেখযােগ্য। মহাভারত থেকে জানা গেছে রাজার হস্তক্ষেপে রাষ্ট্র ও তার অধিপতির আবির্ভাব ঘটেছে। সত্যযুগে কোনাে রাজা ছিল না, তাই রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেনি। তখন মানুষ কিন্তু সুখেই দিনযাপন করত। শাস্ত্রমতে বিষ্ণুর ইচ্ছায় বিরজস্‌ নামে এক রাজার উৎপত্তি হয়।

কিন্তু তিনি সার্বভৌম শক্তি গ্রহণ না করায় তাঁর উত্তরসূরি অনঙ্গ ধর্মনিষ্ঠ রাজারূপে নিজেকে প্রমাণ করেন। পরে মহাত্মা পৃথু সব মানুষকে সৎপথে রেখে তাদের মনােরঞ্জন করেছিলেন বলে তাঁর নাম হয় 'রাজা’ (King)। বিষ্ণু স্বয়ং রাজার শরীরে প্রবেশ করেন, যাতে তাঁকে সবাই মান্য করে। মহাকবি ভাসের 'প্রতিমা’ নাটকেরতথ্যসূত্রে বলা হয় খ্রিস্টীয় প্রথম। শতকে রাজা সম্পর্কে এরূপ ধারণা ছিল—“মহতী দেবতা হি এষা নবরূপেন তিষ্ঠতি।” বৈদিক যুগের শেষের দিকে ঋগবেদে এরকমই এক বিখ্যাত যুদ্ধের উল্লেখ আছে, যা । ইতিহাসে ‘দশ রাজার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ভরত গােষ্ঠীর রাজা দিবােদাসের পুত্র সুদাস তাঁর প্রধান পরামর্শদাতা পুরােহিত বিশ্বামিত্রকে অপসারিত করে তার স্থানে বশিষ্ঠ মুনিকে নিয়ােগ করায় ক্রুদ্ধ বিশ্বামিত্র রাজা সুদাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য দশটি উপজাতি গােষ্ঠীর রাজাকে নিয়ে একটি জোট গঠন করেছিলেন। এই গােষ্ঠীগুলির মধ্যে যদু, অনু, কুর, পাঞ্চাল, তুরবস্‌, সূঞ্জয় ইত্যাদির সবকটি পাঞ্জাব, দিল্লি, আফগান সীমান্তে অবস্থিত ছিল।*

রাজশক্তির উত্থান—ষােড়শ মহাজনপদ(Emergence of Kingship powerSixteen Janapadas):-


খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকে আর্যাবর্তে (উত্তর ভারতে) কেন্দ্রীয় রাজশক্তির অভাবে বহু ছােটো রাজ্য গড়ে উঠেছিল। একেই ড. আর. সি. মজুমদার ‘রাজকীয় ঐক্যের যুগ বলেই চিহ্নিত করেছেন (The Age of Imperial Unity.')। বৌদ্ধগ্রন্থ ‘অগুত্তর নিকায়’ এবং জৈন সাহিত্য 'ভাগবতীসূত্র’ এবং 'কল্পসুত্র’ প্রভৃতিতে ষােড়শ মহাজনপদের যে নামের তালিকা আছে, তা হল --


(১) অঙ্গ (পর্ব বিহার বা চম্পা), 

(২) মগধ (দক্ষিণ বিহার বা গিরিব্রজ), 

(৩) কাশী (বারাণসী বা উত্তরপ্রদেশের পূর্বদিক),

(৪) কোশল (অযােধ্যা বা শ্রাবস্তী), 

(৫) বজ্জি বা বুজি (উত্তর বিহার বা বৈশালী)*, 

(৬) মল্ল (গােরক্ষপুর বা কুশিনারা), 

(৭) পাঞ্চাল (রােহিলখণ্ড বা অহিচ্ছত্র), 

(৮) চেদি (বুন্দেলখণ্ড বা শুক্তিমতী) 

(৯) বৎস (এলাহাবাদ বা কৌশাম্বী), 

(১০) মৎস্য (জয়পুর বা বিরাটনগর), 

(১১) কুরু (দিল্লি বা ইন্দ্রপ্রস্থ), 

(১২) কম্বােজ (দক্ষিণ-পশ্চিম কাশ্মীর। বা রাজপুর),

(১৩) শূরসেন (মথুরা), 

(১৪) অবন্তী (মালব বা উজ্জয়িনী ও মহিষ্মতী), 

(১৫) অস্মক (গােদাবরী উপত্যকা অঞ্চল বা পাটলি) এবং 

(১৬) গান্ধার (পেশােয়ার ও রাওয়ালপিন্ডি বা তক্ষশীলা।*

হেমচন্দ্র রায়চৌধুরি বলেছেন “সূর্যকে কেন্দ্র করে যেমন। গ্রহগুলি আবর্তিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি মগধকে কেন্দ্র করে খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকের মহাজনপদগুলি আবর্তিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। 







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ