উদ্ভিদ দেহে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া টি আলোচনা করো(Discuss the process of photosynthesis in a plant body)
সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis):-
উদ্ভিদের আলােকের উপস্থিতিতে, ক্লোরােফিল (Chlorophyll) -এর সাহায্যে,পরিবেশ থেকে গৃহীত জল এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (Carbon dioxide) দ্বারা গ্লুকোজ (Glucose) নামের শর্করা (Sugar)
সালোকসংশ্লেষ
তৈরি করে। আলােকের উপস্থিতিতে এই প্রস্তুতি অর্থাৎ,সংশ্লেষ হয় বলে,এই প্রক্রিয়ার নাম সালােকসংশ্লেষ বা ফটোসিন্থিসিস (Photos ynthesis)। কারণ,গ্রীক ফোটো (Photo) অর্থাৎ, আলােক এবং সিন্থিসিস (Synthesis) অর্থাৎ,সংশ্লেষ—এই দুটি শব্দ মিলে ফোটোসিন্থিসিস শব্দটি গঠিত হয়েছে।অতএব, সবুজ উদ্ভিদের যে প্রক্রিয়ায় আলোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরােফিলের সাহায্যে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে গলুকোজ নামের শর্করা তৈরি করে, তাকে সালােক-সংশ্লেষ (Photosynthesis) বলা হয়।
সালোকসংশ্লেষেৱ উপাদান (Components of photosynthesis):-
উপরের আলোচনা থেকে বােঝা যায় যে, সালােকসংশ্লেষের জন্য আলােক, ক্লোরােফিল,জল এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড এই চারটি প্রধান উপাদানের প্রয়ােজন। এই উপাদানগুলি উদ্ভিদ কিভাবে এবং কোথা থেকে পায়, নিচে সেই সম্বন্ধে আলােচনা করা হল।
আলােক (Light):—
আলােক ছাড়া সালােকসংশ্লেষ হয় না। সূর্যালোক (Sunlight) অর্থাৎ,সূর্যের আলাে-ই সালােকসংশ্লেযে প্রয়ােজনীয় আলােকের উৎস। সেইজন্য, দিনের বেলায় সালোকসংশ্লেষ হয়,রাত্রে হয় না। অবশ্য, কৃত্রিম আলােতেও সালােকসংশ্লেষ হওয়া সম্ভব।
ক্লোরোফিল (Chlorophyll):—
উদ্ভিদের সবুজ অংশের কোষে ক্লোরােদর দেহে প্লাটিড (Chloroplastid) বা ক্লোরােপ্লাস্ট (Chloroplast) নামের অনেকগুলি করে সজীব অংশ থাকে ।এইসব ক্লোরােপ্লাসটিডের মধ্যে ক্লোরােফিল (Chlorophyll) নামের সবুর্জ রঙ্গক (Pigment) কণা থাকে। ক্লোরােফিল এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় আলােক-শক্তি (Light energy) শােষণ করতে পারে।
জল (Water):--
উদ্ভিদ মূলরােমের সাহায্যে মাটি থেকে জল শােষণ করে।ঐ জল মূল, কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখার জাইলেম (Xylem) কলার মধ্য দিয়ে সবুজ অংশের কোষে অর্থাৎ,ক্লোরােপ্লাটিড-যুক্ত কোষে পৌছায়।জল সালােকসংশ্লেষের অন্যতম প্রধান রসদ।
কার্বন ডাই-অক্সাইড (Carbon dioxide):-
কার্বন ডাই-অক্সাইড সালােক সংশ্লেষের দ্বিতীয় প্রধান রসদ। বায়ুর অন্তর্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষের মধ্যে প্রবেশ করে। পত্রে এই ব্যাপন ঘটে পত্রের ত্বকে অবস্থিত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম দ্বারা রন্ধ্রের অর্থাৎ,পত্ররন্ধ্র (Stomata)-এর মধ্য দিয়ে। দিনের বেলায় পত্ররন্ধ্রগুলি সাধারণত খােলা থাকে। তথন কার্বন ডাই-অক্সাইড পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে পত্রে। প্রবেশ করে এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষান্তর রন্ধ্রের মধ্য দিয়ে অবশেষে ক্লোরােফিল যুক্ত কোষে পৌঁছায়। পদ্ম, শালুক, ইত্যাদি আংশিক জল-নিমগ্ন উদ্ভিদ,কচুরিপানা, বড় পানা, ইত্যাদি ভাসমান উদ্ভিদ এবং পালিক, ইত্যাদি উভচর উদ্ভিদেরা স্থলজ উদ্ভিদেরমতাে (উপরে বর্ণিত উপায়ে) কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। তবে, পাতাশেওলা, ইত্যাদি জলে সম্পূর্ণ ডুবে থাকা অর্থাৎ, জল-নিমগ্ন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষের মধ্যে প্রবেশ করে।
সালােকসংশ্লেষের ঘটনাস্থল (Site of photosynthesis):-
আগে বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদের ক্লোরােপ্লাসটিড-যুক্ত কোষেই সালােকসংশ্লেষ হয়। সবুজ পত্রের কোষে ক্লোরােপ্লাটিড খুব বেশি থাকায়, সবুজ পত্র-ই সালােক-সংশ্লেষের প্রধান কেন্দ্র স্থল। পত্র ছাড়া, উদ্ভিদের কচি কাণ্ডের সবুজ অংশে, প সবুজ বৃতি এবং কাঁচা ফলের সবুজ ফলত্বকেও ক্লোরােপ্লাস্ট থাকে। কাজেই অঙ্গগুলিতেও সালোকসংশ্লেষ হয়। তবে, গঠনগত বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রধান সালো, সংশ্লেষকারী অঙ্গ হিসাবে পত্রকেই গণ্য করা হয়ে থাকে।
পত্রের প্রধান কলাকে বলে মেসােফিল কলা (Mesophyll tissউএ).দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পত্রে এই কলার কোষগুলি সাধারণত দুধরনের। উপরে করে ত্বকের দিকে অবস্থিত দু-তিন সারি পিপার মতো কোষ ঘন-সন্নিবিষ্টভাবে বিনা থেকে মেসােফিল কলার প্যালিসেড প্যারেন্কাইমা (Palisade paren-chyma) অঞ্চল গঠন করে। এই কোষগুলির লম্ব অক্ষ উপরের ত্বকের সঙ্গে পর্যায় সমকোণে থাকে। প্যালিসেড প্যারেনকাইমাতে ক্লোরােপ্লাটের সংখ্যা খুব বেশি বিতি এবং এরাই পত্রে প্রধান সালােকসংশ্লেষকারী কোষ।পত্রের নিচের ত্বকের দিকে মাধ্য অবস্থিত অনেকগুলি গােলাকার অথবা ডিম্বাকার প্যারেন্কাইমা কোষ দিয়েগঠিত হয় মেসােফিল কলার স্পঞ্জী প্যারেনকাইমা (Spongy parenchyma) অঞ্চল। এই কোষগুলির মধ্যেও ক্লোরােপ্লাস্ট থাকে ;তবে,প্যালিসেড প্যারেনকাইমার কোষগুলির থেকে কম।স্পঞ্জী প্যারোইমা অঞ্চলের কোষগুলি ধনসন্নিবিষ্ট নয়। এদের চারপাশে বড় বড় বায়ু-গহ্বর থাকে। বায়ু-গহবরগুলি সরাস২ি পত্ররন্ধ্রের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করে। কাজেই, স্পঞ্জী-কোষগুলির পক্ষে বায়ু -গন্ধ, থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শােষণ করার সুবিধা আছে। সেই জন্য, এদের প্রধান কাজ কার্বন ডাই-অক্সাইড শােষণ করা। অবশ্য,এরা কম-বেশি সালােকসংশ্লেষও করে। পত্রের পাতলা ও প্রসারিত তল অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে আলোক শেষ। করার উপযােগী। সুতরাং, ক্লোরােফিল-যুক্ত মেসােফিল স্তর,পত্ররন্ধ্রের উপস্থিতি তথা সামগ্রিক গঠন—সবরকম সুবিধা থাকার জন্যই পত্র আদর্শ সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গ।
সালোকসংশ্লেষের কৌশল (Mechanism of photosynthesis ):-
সালােকসংশ্লেষের সময়,সূর্যালােক ও ক্লোরােফিলের উপস্থিতিতে ছয় অণু (Molecule) কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং,বারাে অণু জল থেকে এক অণু গ্লকোজ,ছয় অণু জল এবং ছয় অণু অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। অবশ্য,কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জল সরাসরি মিলে গ্লুকোজ সৃষ্টি করে না। সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। অনেকগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়া একের পর এক ঘটার পর, শেষে গ্লকোজ তৈরী হয়। সালোকসংশ্লেষের সমস্ত বিক্রিয়াগুলিকে দুটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়।
প্রথম পর্যায়ে,
ক্লোরােফিল সূর্যালােক থেকে সৌরশক্তি (Solar energy) শােষণ উপতে করে সক্রিয় (Activated) হয়ে ওঠে। সক্রিয় ক্লোরােফিল তখন জলকে H+ (হাইড্রোজেন আয়ন) এবং OH- (হাইড্রক্সিল আয়ন) -এ বিশ্লিষ্ট করে। এই বিক্রিয়াকে জলের আলোক-বিশ্লেষণ বা ফোটোলিসিস (Photolysis) বলা হয়। এই পর্যায়ের বিক্রিয়ায় সূর্যালােক অপরিহার্য। হাইড্রক্সিল অয়ন থেকে অন্য কতকগুলি বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শেষপর্যন্ত জল ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই অক্সিজেন পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ের ,
বিক্রিয়াগুলিতে আলােকের প্রয়োজন হয় না। এই পর্যায়ে,হাইভােজেন আয়ন কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বিজারিত (Reduced) করে।ফলে,গলুকোজ উৎপন্ন হয়। সালােকসংশ্লেষের দ্বিতীয় পর্যায়ের বিক্রিয়াগুলির ফলে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ-দেহে উৎপন্ন গ্লুকোজ অণুর অঙ্গীভূত হয় বলে, এই প্রক্রিয়াকে অঙ্গার-আত্তীকরণ (Carbon assimilation)-ও বলা হয়।
আলােক বিক্রিয়ার সময় ক্লোরােফিল যে সৌরশক্তি শোষণ করে, তা ক্রমে সালােকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজের মধ্যে সংযােজিত হয় এবং ক্লোরােফিল আবার আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এইভাবে, সালােকসংশ্লেষের সময় উৎপন্ন প্রতি গ্রাম-অণু (Gram-molecule) গ্লকোজ অর্থাৎ,180 গ্রাম গ্লুকোজের মধ্যে 673 কিলােগ্রাম-ক্যালরি (Kilogram calorie)* শক্তি (সৌরশক্তি) স্থৈতিক শক্তি (Potential energy)-রূপে আবদ্ধ হয়।
সালােকসংশ্লেষের ফলে জল এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড—এই দুটি সরল থেকে গ্লুকোজ নামক অপেক্ষাকৃত জটিল যৌগ সংশ্লেষিত হয়। এর ফলে উদ্ভিদের শুষ্ক ওজন (Dry weight) বাড়ে এইরকম যে বিপাকের ফলে সরল যৌগ থেকে জটিল যৌগ সংশ্লেষিত হয় এবং জীবের শুষ্ক ওজন বাড়ে, তাকে উপচিতি (Anabolism) বলে।সালােকসংশ্লেষ উপচিতির অন্যতম উদাহরণ।
সালােকসংশ্লেষের তাৎপর্য (Significance of photosynthesis):-
জীব-জগতে সালােকসংশ্লেষের গুরুত্ব খুব বেশি। এই প্রক্রিয়া যে কেবল উদ্ভিদ-জীবনে একান্ত অপরিহার্য তাই নয়, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে সালােকসংশ্লেষের অবদান অপরিসীম নিচে এবিষয়ে আলােচনা করা হল।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সালােকসংশ্লেষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এই প্রক্রিয়ায় সৌরশকি সরাসরি স্থৈতিক (রাসায়নিক) শক্তি-রূপে সর্বপ্রথম গ্লকোজ অণুর মধ্যে আবদ্ধ হয়।গুকোজ থেকে শ্বেতসার বা স্টারচ (Starch) নামের আর এক ধরনের কার্বোহাইডেট (Carbohydrate) তৈরী হয়। শ্বেতসার, উদ্ভিদের কোযে, বিশেষতঃ মূল ও বীজের কোষে, সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে। প্রয়ােজনের সময় (যেমন— মুকুলের পরিস্ফুরণের সময়), শ্বেতসার থেকে আবার গ্লকোজ তৈরী হয় এবং ক্রিয়াশীল অঙ্গে পরিবাহিত হয়। গ্লকোজ থেকে সেলুলোজ (Cellulose) নামের আর এক ধরনের জটিল কার্বোহাইড্রেট প্রস্তুত হয়।সেলুলােজ উদ্ভিদের কোষ-প্রকার গঠন করে। গ্লুকোজ থেকে (শ্বেতসার ও সেলুলােজ ছাড়া) সরাসরি আরও কয়েক ধরনের কার্বোহাইড্রেট তৈরী হয়। কার্বোহাইড্রেট থেকে প্রােটীন (Protein) এবং স্নেহদ্রব্য ও তৈল (Fats and oils)-জাতীয় খাদ্য সংশ্লেষিত হয়ে থাকে।উদ্ভিদ-দেহে উৎপন্ন এইসমস্ত খাদ্যের বেশিরভাগই উদ্ভিদের নিজস্ব পুষ্টির প্রয়ােজনে ব্যবহৃত হয়। উদ্বৃত্ত খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত থাকে। বংশবৃদ্ধির সময়, ভ্রণ ও শিশু-উদ্ভিদ অর্থাৎ,চারাগাছ এই সমস্ত খাদ্য থেকে পুষ্ট হয় ।
অথবা ক্ষেত্রবিশেষে, প্রতিকূল অবস্থায় পরিণত উদ্ভিদও সঞ্চিত খাদ্যের সাহায্যে পুষ্টিলাভ করে। প্রোটীন প্রােটোপ্লাজম (Protoplasm) গঠনের কাজে লাগে। কাজেই, এদের সাহায্যে দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি হয়। উৎসেচক(Enzyme)-মাত্রই প্রােটীন দিয়ে গঠিত। উৎসেচকেরা কোষের অন্তর্গত যাবতীয় রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
মানুষ-সহ সমস্ত প্রাণী প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরােক্ষভাবে খাদ্যের জন্য সালোকসংশ্লেষকারী উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে। যেসব প্রাণী সরাসরি উদ্ভিজ্জ খাদ্যে পুষ্ট হয়, তারা (অর্থাৎ,শাকাশী প্রাণীরা) প্রত্যক্ষভাবে সালােকসংশ্লেয-জাত খাদ্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। মাংসাশী প্রাণীরা সাধারণতঃ শাকাশী প্রাণীদের মাংসে পুষ্ট হয়। এই ধরনের প্রাণীরা, অতএব, খাদ্যের জন্য সালােকসংশ্লেষের উপর পরােক্ষভাবে নির্ভরশীল।
প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য বর্তমান সভ্য জগতের তাপ ও শক্তির প্রধান উৎস এবং যে কেবল শিল্পে ব্যবহৃত দুটি অপরিহার্য ইন্ধন (Fuel)–কয়লা ও পেট্রোলিয়াম (Petroleum) র ক্ষেত্রেও যথাক্রমে প্রত্যক্ষভাবে ও পরােক্ষভাবে উদ্ভিদের অবদান। প্রায় তিন হাজার লক্ষ বৎসর আগে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সেই সময়কার উদ্ভিদ-রাজ্যের বেশ কিছু অংশ এক বিশেষ ধরনের জীবাশ্ম (Fossil) -এ পরিণত হয় এই জীবাশ্মই কয়লা। কয়লার মধ্যে সঞ্চিত শক্তি, প্রকৃতপক্ষে,সালোকসংশ্লেযের ফলে আবদ্ধ সৌরশক্তি। পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural gas) প্রধানত প্রাণীর এবং ক্ষেত্রবিশেষে উদ্ভিদের মৃত্যু ও পচনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল।
সালােকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে (বায়ুমণ্ডল থেকে এবং জলে দ্রবীভূত) কার্বন ডাই-অক্সাইড গৃহীত হয় এবং সালােকসংশ্লেষের ফলে উদ্ভূত অক্সিজেন গ্যাস পরিবেশে ফিরে যায়।স্বভাবতঃই মনে হয়, ক্রমাগত সালোকসংশ্লেষের ফলে পরিবেশ। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেনের পরিমাণ যথাক্রমে কমে যায় এবং বেডে কিন্তু, জীবের শ্বসনের ফলে (পরে দ্রষ্টব্য), ঠিক এর বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হয় তা পরিবেশ থেকে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের প বেড়ে যায়। অতএব, সালােকসংশ্লেষ ও শ্বসন- এই দুটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যৌথভাবে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেনের পরিমাণের সমতা বজায় রাখতে অংশতঃ সাহায্য করে।
উপরের আলােচনা থেকে জানা যায় যে,সালোকসংশ্লেষের তাৎপর্য মূলতঃ ত্রিবিধ । যেমন—
(1) সূর্যই সকল শক্তির উৎস। ক্লোরোফিল সেই অদ্বিতীয় পরম - যা সৌরশক্তি গ্রহণ করতে পারে এবং সালােকসংশ্লেষ নামের অনন্য শারীরবৃত। প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খাদ্যে (গ্লুকোজে) ঐ শক্তিকে আবদ্ধ করে। এইভাবে,সৌরশমি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয়।
(2) সালােকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজ পরে শ্বেতসারে পরিবর্তিত হওয়ায়, গ্লুকোজে আবদ্ধ শক্তি শ্বেতসারে পরিচালিত হয়। এদিকে কোষের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, আবার সালোকসংশ্লেয়। প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ তৈরী হতে পারে। এইভাবে, দিনের বেলায় ক্রমাগত সালােক, সংশ্লেষ চলতে থাকে। রাত্রে ডায়াস্টেজ (Diastase) নামের উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতায় শ্বেতসার আবার শর্করায় পরিণত হয়ে মূল, মৃদগত কাণ্ড, ইত্যাদি। ভাণ্ডার-অঙ্গে সংবাহিত হয় এবংসেখানে লিউকোপ্লাসটিড(Leucoplastid)-এর সাহায্যে আবার শ্বেতসারে পরিণত হয়ে, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত থাকে। আগে বলা হয়েছে, শাকাশী প্রাণীরা উদ্ভিজ্জ খাদ্যে, এবং মাংসাশী প্রাণীরা শাকাশী প্রাণীদের মাংসে পুষ্ট হয়। অতএব, সালােকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজে আবদ্ধ শক্তি উদ্ভিদ থেকে ক্রমে শাকাশী প্রাণী এবং মাংসাশী প্রাণীর দেহে সংবাহিত হয়, এবং এদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তি জোগায়। এইভাবে উৎস (সূর্য) থেকে (খাদ্যে) গৃহীত শক্তি জীবজগতের ক্রিয়াশীলতা বজায় রাখে।
(3) পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অকিজেনের পরিমাণের সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করা সালােকসংশ্লেষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফলশ্রুতি।
0 মন্তব্যসমূহ