শ্বসন বনাম দহন এবং অবাত শ্বসন বনাম কোহল-সন্ধান সম্পর্কে আলোচনা করো।
শ্বসন বনাম দহন (Respiration versus combustion)-
শ্বসনকে এক ধরনের দহন বলা হয়েছে। শ্বসন মূলতঃ একরকম জারণ (Oxidation) বিক্রিয়া। শ্বসনে কোষের মধ্যস্থ খাদ্য (গ্লুকোজ) অক্সিজেনের সহায়তায় জারিত হয় এবং এর ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জল উৎপন্ন হয় এবং খাদ্যের মধ্যস্থ শক্তি নির্গত হয়। দহন-ও জারণ বিক্রিয়া। গ্লকোজের দহনেও কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জল উৎপন্ন হয় এবং শক্তি নির্গত হয়। কেবল তাই নয়, শ্বসনের ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ থেকে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জল উৎপন্ন হয় এবং যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, সমপরিমাণ গ্লুকোজের দহনের ফলেও (শ্বসনের মতো) একই পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জল উৎপন্ন হয় এবং একই পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। শ্বসন ও দহনের মধ্যে এইরকম সাদৃশ্য থাকলেও,এদের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্যও আছে।
যেমন ---
(1) দহন অনেক বেশি উষ্ণতায় হয়;কিন্তু, শ্বসন জীব-দেহের স্বাভাবিক (অর্থাৎ,অনেক কম) উষ্ণতায় হয়।
(2) দহনে উৎসেচকের প্রয়োজন হয় না;কিন্তু, শ্বসনে একাধিক ধরনের উৎসেচকের সাহায্য প্রয়ােজন হয়।
(3) শ্বসন জীবের সহজাত ধর্ম, এটি প্রােটোপ্লাজম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । কিন্তু, দহন জীবের ধর্ম নয়, এটি প্রােটোপ্লজম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
(4) শ্বসনের সময় সচরাচর সরল কার্বোহাইড্রেটের জারণ হয়; কিন্তু, দহনে যে-কোনও যৌগের, এমন কি মৌলেরও জারণ হতে পারে।
(5) শ্বসনের ফলে শক্তি কেবল তাপশক্তি-রূপে নির্গত হয়; কিন্তু, দহনের ফলে শক্তি তাপ ও আলােক-রূপে নির্গত হয় এবং উৎপন্ন জল জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।
অবাত শ্বসন বনাম কোহল-সন্ধান (Anaerobic respiration versus alcoholic fermentation)--
উদ্ভিদ-কোষের অবাত শ্বসনের এবং কোহল-সন্ধানের রাসায়নিক বিক্রিয়া একইরকম। সুতরাং, কোহল-সন্ধান-ওএক ধরনের অবাত শ্বসন। | তবে,
(1) উদ্ভিদ কোষের অবাত শ্বসনের সময় কোষের মধ্যস্থ শর্করা থেকে অ্যালকোহল তৈরী হয় এবং ঐ অ্যালকোহল কোষের মধ্যেই জমা হতে থাকে। কিন্তু,কোহল-সন্ধানের ক্ষেত্রে কোষের বাইরে অবস্থিত শর্করার দ্রবণ থেকে অ্যালকোহল তৈরী হয় এবং উৎপন্ন অ্যালকোহল কোষের বাইরে জমতে থাকে। আবার,
(2) উদ্ভিদ কোষে অবাত শ্বসন হয় অস্বাভাবিক অবস্থায় এবং সাময়িকভাবে। কিন্তু, কোহল- সন্ধান-ই ঈটের স্বাভাবিক অবাত শ্বসনের পদ্ধতি। অবশ্য,উদ্ভিদ কোষের অবাত শ্বসন এবং কোহল-সন্ধান-উভয় ক্ষেত্রেই উৎপন্ন অ্যালকোহলের পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে গেলে, বিষক্রিয়া দেখা দেয়।
0 মন্তব্যসমূহ