দ্বিতীয় পুলকেশী কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর করো । দ্বিতীয় পুলােকেশি, রাজ্যজয়, নবম শ্রেণী

দ্বিতীয় পুলকেশী কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর করো । নবম শ্রেণী




দ্বিতীয় পুলােকেশি:-


বাতাপির চালক্যবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা দ্বিতীয় পলােকেশি মােট বত্রিশ বছর (৬১০-৬৪২ খ্রিঃ) রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে জানতে রবিকীর্তির আইহােল প্রশস্তি’ (৬৩৬ খ্রিঃ), হিউয়েন সাঙ-এর ‘সিইউ-কি’ ও বাণভট্টের হর্ষচরিত’ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযােগ্য।

রাজ্যজয়ঃ-


৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে পুলােকেশির পিতা প্রথম কীর্তিবর্মনের মৃত্যুর পর তার পিতার। বৈমাত্রেয় ভাই মঙ্গলেশ তার সিংহাসনের বৈধ দাবি অস্বীকার করে সিংহাসন দখলের অনেক চেষ্টা করলেও শেষে তাকে হত্যা করে ৬১০ খ্রিঃ সিংহাসন লাভ করেন। এইসময় বিজাপুরের রাজা গােবিন্দ আপ্পায়িককে পরাস্ত করে তিনি সামরিক প্রতিভার পরিচয়। দেন আইহােল প্রশস্তি থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় পুলােকেশি কদম্বরাজাদের রাজধানী বানভাসী জয় করেন। মহিশূরের গঙ্গরাজ দুর্বিনীত কোঙ্গনী তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন। কোঙ্কনের মৌর্যরাজার রাজধানী পুরী তার দখলে আসে। উত্তরে লাট, মালব, গুর্জর ও গুজরাট তিনি জয় করেন। কারি রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মনকে তিনি পরাস্ত ও নিহত করেন। ৬১১ খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের রাজা হর্ষবর্ধন পুলােকেশির কাছে পরাজিত হন। এই ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে দ্বিতীয় পুলােকেশি ‘দক্ষিণাপথনাথ’ ‘পরমেশ্বর’ উপাধি নেন। তিনি বিষুকুন্দিন রাজবংশের তৃতীয় বিক্রমেন্দ্রবর্মনকে পরাজিত করে অন্ত্র জয় করেছিলেন। গােদাবরীর তীরবর্তী পীঠরাম ও ইল্লোরের পাশ্ববর্তী কুণালদ্বীপ তিনি জয় করে ছােটোভাই কুজকে ওই অঞলের শাসক নিযুক্ত করেন। ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘মণিমণ্ডলমের যুদ্ধে’ পল্লবরাজ প্রথম নরসিংহবর্মনের কাছে পুলােকেশি পরাস্ত ও নিহত হন। এই নরসিংহবর্মন ‘বাতাপিকোণ্ড’ উপাধি নিয়েছিলেন।


     নিরবচ্ছিন্ন সামরিক সাফল্যের জন্য পুলােকেশি ‘বিরুদ সত্যাশ্রয়’, ‘শ্রীপৃথ্বিবল্লভ', বল্লভেন্দ্র’, বল্লভরাজ’, বল্লভ প্রভৃতি উপাধি নেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নাসিকের গােহন শিলালিপিতে বিষু উপাসনার

জন্য ‘পরমেশ্বর পরম ভাগবত’ উপাধি নিয়েছিলেন।


       হিউয়েন-সাঙ ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পুলােকেশির রাজধানী বাতাপি পরিভ্রমণে এসে । তাঁর উদারতা, সুশাসন, বীরত্ব ও ধৈর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মুসলিম ঐতিহাসিক আলতাবরির মতে, পুলােকেশি পারস্যের রাজা দ্বিতীয় খসরুর দরবারে ৬২৩-৬২৫ খ্রিস্টাব্দে দূত পাঠিয়েছিলেন। পুলােকেশির মৃত্যুর পর চালুক্যদের গৌরব ম্লান হয়ে যায়। তাঁর পুত্র ‘প্রথম বিক্রমাদিত্য’ (৬৫৫ খ্রিঃ) বাতাপির সিংহাসনে বসেন। তিনি হারানাে গৌরব কিছটা ফেরাতে পেরেছিলেন। ৬৮০ খ্রিঃ প্রথম বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর পর তাঁর অধিকারী দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য (৭৩৩-৭৪৬ খ্রিঃ) বাতাপির সিংহাসনে বসেন। তিনি বাজাদের পরাস্ত করে রাজধানী কাঞি লুণ্ঠন করেন। দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্যের পুত্র দ্বিতীয় কীৰ্তিবর্মন (৭৪৬-৭৫৩ খ্রিঃ) রাষ্ট্রকূটশক্তির কাছে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হলে ৭৫৩ খ্রিঃ মান্যখেতের রাষ্ট্রকুট বংশ  দাক্ষিণাত্যে রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপন করেন এবং চালুক্য কর্তৃত্বের চিরসমাপ্তি ঘটে।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ