রাষ্ট্রকূটদের প্রতিষ্ঠাতা কে ? রাষ্ট্রকূট বংশ সম্পর্কে আলোচনা করো। নবম শ্রেণী
রাষ্ট্রকুট বংশ:-
রাষ্ট্রকূটদের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রকূট্রাজ দন্তিদুর্গ। চালুক্যদের অধীনস্থ সামন্ত কর্মচারী ছিলেন রাষ্ট্রকুটরা। পরে চালুক্যদের দুর্বলতার সুযােগে রাষ্ট্রকুটরাজ দন্তিদুর্গ চালুক্যরাজ দ্বিতীয় কীর্তিবর্মনকে পরাস্ত করে (৭৫৩ খ্রিঃ) স্বাধীন রাষ্ট্রকূট রাজ্যের পত্তন ঘটান। দন্তিদুর্গের বংশধর প্রথম কৃষ্ণ (৭৫৮৭৭৩ খ্রিঃ) কোঙ্কন, মহিশুর, বেঙ্গি প্রভৃতির শাসকদের পরাস্ত করেছিলেন। প্রথম কৃষ্ণ ইলােরার কৈলাসনাথের মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তারপর দ্বিতীয় গােবিন্দ (৭৭৩-৭৮০ খ্রিঃ) সিংহাসনে বসেন। ধ্রুব ৭৮০-৭৯৩ খ্রিঃ পর্যন্ত গৌরবের সঙ্গে রাজত্ব করেছিলেন।
রাষ্ট্রকূট বংশ
তৃতীয় গােবিন্দ :-
রাষ্ট্রকুট ধ্রুবর পুত্র তৃতীয় গােবিন্দ পিতার মৃত্যুর পর ৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। তিনি ত্রিশক্তির দ্বন্দ্বের যুগের অন্যতম দক্ষিণি প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন। তাঁর শাসনকালে ত্রিশক্তির দ্বন্দ্বে বাংলার পালরাজা ধর্মপালকে তিনি পরাস্ত করেন। গােবিন্দর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বল্লমধারী বাহিনী গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমস্থলে প্রতিহাররাজ দ্বিতীয় নাগভট্টকে পরাস্ত করেছিল (৮০৯-৮১০ খ্রিঃ)। তিনি হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল।
ইতিমধ্যে তৃতীয় গােবিন্দর অনুপস্থিতির সুযােগে রাষ্ট্রকূট রাজ্যে গৃহবিবাদ শুরু হয়। ধ্রুবর অনেক পুত্রের মধ্যে চারজন এই দ্বন্দ্বের অন্যতম খলনায়ক হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে তৃতীয় গােবিন্দর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কম্ভ রণাচলােক গঙ্গাবাড়ির শাসক ছিলেন। তবে তাঁর চেয়ে অনেক যােগ্য ছিলেন গােবিন্দ। তাই তাঁকে প্রজারা বেশি করে চাইত। সমকালীন লিপি থেকে জানা যায় বৃদ্ধ ধ্রুব তৃতীয় গােবিন্দকে (তৃতীয় পুত্র) সিংহাসনে বসিয়ে রাজ্যাভিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তখন যুবরাজ গােবিন্দ রাজাধিরাজ পরমেশ্বর’ উপাধি নেন। পরে তৃতীয় গােবিন্দ ‘প্রভূতবর্ষ’, ‘জগত্তুঙ্গ’, ‘জন বল্লভ’, ‘শ্রীবল্লভ’, ‘ত্রিভুবনধ্বজ’ কীর্তিনারায়ণ’ইত্যাদি উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। রাধনপুর শিলালিপি’, ‘ওয়ালি শিলালিপি, বরােদা অনুশাসন ‘থেকে তাঁর কৃতিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। দ্বিতীয় নাগভট্টের ‘বুচকলি শিলালিপি’ থেকে তাঁর বীরত্ব সম্পর্কে জানা যায়।
তৃতীয় গােবিন্দর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শর্ব প্রথম অমােঘবর্ষ (৮১৫-৮৭৭ খ্রিঃ) সিংহাসনে বসেন। অমােঘবর্ষের পুত্র দ্বিতীয় কৃষ্ণ (৮৭৮-৯১৪ খ্রিঃ) রাজা হন। তারপর তৃতীয় ইন্দ্র (৯১৪-৯২২ খ্রিঃ) কিছুটা সামরিক প্রতিভার পরিচয় দেন। তাঁর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় অমােঘবর্ষ, চতুর্থ গােবিন্দ, তৃতীয় অমােঘবর্ষ ৯২২-৯৩৯ খ্রিঃ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে রাজত্ব করলেও পতনের দিন ঘনিয়ে আসে। তবে রাষ্ট্রকুট বংশের শেষ শক্তিশালী রাজা হলেন তৃতীয় কৃষ্ণ (৯৩৯-৯৬৮ খ্রিঃ)।
কল্যাণের চালুক্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের সভাকবি বিহনের ‘বিক্রমাঙ্কদেবচরিত’ ও সভাপণ্ডিত বিজ্ঞানেশ্বরের ‘মিতাক্ষরা’ গ্রন্থ থেকে বহু কথা জানা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ