মােগল রাজশক্তির কেন্দ্রীভূত শাসন ও সংহতি প্রাদেশিক শাসন, (Centralised and integrated rule of Mughal Royal Power), রাজস্ব ব্যবস্থা,কেন্দ্রীয় শাসন, প্রাদেশিক শাসন, নবম শ্রেণী

মােগল রাজশক্তির কেন্দ্রীভূত শাসন ও সংহতি (Centralised and integrated rule of Mughal Royal Power):-

ভূমিকাঃ-

মােগল শাসনব্যবস্থার প্রথম প্রধান রপকার হিসাবে আকবর উদার, দূরদর্শী, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রজাকল্যাণকামী শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তক ছিলেন। একথার সমর্থনে রিজভি বলেছেন, 'আকবরের শাসনব্যবস্থা শেরশাহের শাসনের অনুকরণ মাত্র”। তবে তাঁর শাসনব্যবস্থায় উদ্ভাবনী শক্তি কম থাকলেও তা মধ্যযুগের মাপকাঠিতে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। 



কেন্দ্রীয় শাসনঃ-


আকবর স্বৈরাচারী হলেও স্বেচ্ছাচারী নন। ঐশ্বরিক অধিকারতত্ত্বে বিশ্বাসী হলেও প্রজাপীড়ক ছিলেন না বরং তিনি প্রজাপালকরূপে সর্বোচ্চ প্রজাকল্যাণের আদর্শ মেনে চলতেন। আর সে কারণেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পরামর্শক্রমেই তিনি শাসন করতেন। এই মন্ত্রীরা হলেন—

(১) ভকিলইমুলাক (প্রধানমন্ত্রী)।

(২) দেওয়ান-ও-উজিরাৎ (অর্থমন্ত্রী)। 

(৩) মির বকশি (সামরিক মন্ত্রী)।

(৪) সদর-উস-সুদুর (ধর্মীয় ও দান বিষয়ক মন্ত্রী)। 

(৫) মির সামান (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)। 

(৬) মুহতাসিব- (নীতি ও আদর্শ সংরক্ষক মন্ত্রী) এবং

(৭) কাজিউলকাজা (প্রধান, বিচারপতি)। কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য অন্য যেসব কর্মচারী ছিলেন, তারা হলেন। আরিজ-ই-মুবারক, মির বাহরি, মির আরাজ, মিরমঞ্জিল, মির তেজক, মুস্তাফি, দারােগাইসলখানা ইত্যাদি। এইভাবে কেন্দ্রীয় শাসনকে সুগঠিত করেছিলেন আকবর।

প্রাদেশিক শাসনঃ-


আবুল ফজলের মতে, আকবর সমগ্র সাম্রাজ্যকে ১৫টি সুবা বা প্রদেশে ভাগ, করেছিলেন। কেউ-কেউ বলেন, সাম্রাজ্যকে ১২টি সুবাতে তিনি ভাগ করেছিলেন। ঔরঙ্গজেবের সময় সুবার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২১টিতে। প্রতিটি সুবা অনেকগুলি সরকারে, প্রতিটি সরকারকে কয়েকটি পরগনায় এবং পরগনাকে বহু গ্রামে ভাগ করেছিলেন। আকবর যেসব সুবা গঠন করেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখ্য  ছিল—বাংলা, বিহার, এলাহাবাদ, অযােধ্যা, আগ্রা, লাহাের, দিল্লি, মালব, মুলতান, কাবুল, কান্দাহার, গুজরাট, আজমির ইত্যাদি। সুবার প্রধান শাসককে সুবাদার, নাজিম বা সিপাহসালার বলা হত। 'সুবাদার’ কথার অর্থ রাজ্যপাল। তাকে সাহায্যের জন্য প্রতিটি সুবাতে দেওয়ান, কাজি, বকশি, সদর ও ওয়াকিয়ানবিশ নামক কর্মচারী ছিল।

রাজস্ব ব্যবস্থাঃ-


আকবরের রাজস্বমন্ত্রী তােডরমল শেরশাহেরও রাজস্বমন্ত্রী ছিলেন। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে টোডরমল জমি জরিপ করেই রাজস্ব স্থির করেছিলেন। মােগল আমলে এটি ‘জাব্‌তি প্রাথা’ নামে পরিচিত ছিল। জমি জরিপের জন্য তিনি ইলাহি গজ’- এর প্রবর্তন করেছিলেন। তােডরমল মােট তিন ধরনের রাজস্বব্যবস্থা চালু করেছিলেন—জাব্‌তি বা দহশালা, গাল্লাবখ্‌স্‌, নাস্‌ক্‌। জাবৃতি প্রথা সমগ্র উত্তর ভারতে প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে জমিকে চার শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছিল—


(১) ‘পােলাজ’ (সারা বছর চাষের জমি), 

(২) ‘পরৌটি’ (উর্বরতা রক্ষার জন্য যে জমি বহুদিন পতিত রাখা হয়), 

(৩) ‘চাচর’ (যে জমি ৩/৪ বছর পতিত থাকে) এবং 

(৪) ‘বানজার’ (যে জমি ৫ বছরের বেশি সময় পতিত রাখা হয়)। ভারতের উত্তর-পশ্চিম। সীমান্তের কাবুল, কান্দাহার, কাশ্মীর ও সিন্ধুপ্রদেশে গাল্লাবখস্ প্রথা (বা বাটাই) এবং গুজরাট। ও বাংলা প্রদেশে নাক প্রথা (বা কানকুৎ) প্রচলিত ছিল। এই দুই ক্ষেত্রে কোনাে জমি। জরিপ না করেই রাজস্ব আদায় করা হত। সব রাজস্বব্যবস্থার ক্ষেত্রে মােট উৎপন্ন ফসলের ১/৩ ভাগ ভূমিরাজস্ব আদায় হত। রাজস্ব নগদ অর্থে বা শস্যের মাধ্যমে দেওয়া যেত।

বিচারব্যবস্থাঃ-


বিচারকার্য পরিচালনার সময় আকবর নিজেই উপস্থিত থাকতেন। ‘কাজি-উল-কাজাৎ’ (বা প্রধান বিচারপতি) বিচারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। বিচার নিরপেক্ষভাবেই হত। প্রধান কাজি ছাড়াও ‘মির আদল’ ও ‘সদর-উস-সুদুর’ বিচার বিভাগের কাজে যুক্ত ছিলেন। গ্রামে পঞ্চায়েতও বিচারকার্য করত। বিচারক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম রীতিনীতি মেনে বিচার হত। 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ