শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
শশাঙ্ক:-
শশাঙ্কর আসল নাম ‘নরেন্দ্রাদিত্য’। বিহারের রােটাসগড়ের এক শিলালিপিতে আবার ‘শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্ক’ কথাটির উল্লেখ আছে। এর থেকে অনেকে মনে করেন, (বঙ্গদেশে গুপ্তরাজ মহাসেনগুপ্তের অধীনে একজন সামন্ত কর্মচারীরূপে তিনি জীবন শুরু করেছিলেন। পরে গুপ্তরাজ মহাসেনগুপ্তের দুর্বলতার সুযােগে বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতিরুপে শশাঙ্ক ক্ষমতালাভ করেন। এইসময় থেকেই স্বাধীন গৌড়রাজ্যের পত্তন ঘটে বলে ‘গঞ্জাম' লিপি থেকে জানা যায়। তবে বৌদ্ধগ্রন্থ আর্যমঞ্জুশ্ৰীমূলকল্প’-তে উল্লেখ আছে, ৫২৫ খ্রিস্টাব্দের আগে স্বাধীন বঙ্গের কোনাে অস্তিত্বই ছিল না। ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতালাভের পর গঞ্জাম, কঙ্গোদ, উৎকল, মগধ, বারাণসী, দণ্ডভূতি বা দাঁতন ইত্যাদি জয় করে স্বাধীন গৌড়রাজ্যের পত্তন ঘটান। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি শাসনকাঠামাে গড়ে তােলেন। শশাঙ্ক মালবের রাজা দেবগুপ্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে কনৌজের মৌখরি ও থানেশ্বরের পুষ্যভৃতি রাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। মৌখরিরাজ গ্রহবর্মা ও থানেশ্বরের রাজা রাজ্যবর্ধন শশাঙ্কর হাতেই নিহত হন। এইসময় গ্রহবর্মার স্ত্রী রাজ্যশ্রীকে তিনি বন্দিনিক চেয়েছিলেন। তাই থানেশ্বর ও কনৌজের পরবর্তী রাজা হর্ষবর্ধন শশাঙ্ককে কঠোর দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মনের (মৃত্যু ৬৫০ খ্রিঃ) সঙ্গে হয়ন, মৈত্রী স্থাপনও করেছিলেন। কিন্তু ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্কর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত হর্ষব তাকে কিছুই করতে পারেননি। শশাঙ্ক কেবল রাজ্যবিজেতাই নন, সুশাসকও ছিলেন। তাঁর রাজধানী কর্ণসুবর্ণ (বর্তমান মুর্শিদাবাদের রাঙামাটি গ্রাম) ছিল একটি সমৃদ্ধ নগরী এখানে ১০টি বৌদ্ধ মঠ ছিল বলে হিউয়েন সাঙ তাঁর ‘সি-ইউ-কি’ গ্রন্থে লিখেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ