মাৎস্যন্যায় সম্পর্কে আলোচনা করো।
মাৎস্যন্যায় :-
গৌড়ের শেষ স্বাধীন নৃপতি শশাঙ্কর মৃত্যুর (৬৩৭ খ্রিঃ) পর তাঁর পুত্র মানবদেব মাত্র পাঁচ মাস সতেরাে দিন রাজত্ব করেছিলেন। তারপর প্রায় একশাে বছর ধরে বাংলাতে কোনাে শাসক না থাকায় নিয়ম-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। এই রাজনৈতিক অরাজকতা বা নৈরাজ্যকে বৌদ্ধ পণ্ডিত লামা তারানাথ 'মাৎস্যন্যায়’ বলে চিহ্নিত করেছেন। বৌদ্ধ গ্রন্থ 'আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’-তেব্যঙ্গ করে এই শাসনহীন নৈরাজ্যকে ‘গৌড়তন্ত্র' অর্থাৎ এটাই গৌড়ের সাংবিধানিক রীতিনীতি বলে। উল্লেখ করা হয়। মাছের ন্যায় আচরণ, অর্থাৎ পুকুরের বড়াে মাছ যেমন ছােটোকে খেয়ে ফেলে ;বাংলার শক্তিশালী মানুষ তেমনি দুর্বলদের শােষণ করতে থাকেন। জোর যার মুলুক তার’—এটাই রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। এই মাৎস্যন্যায়ের যুগে যে যার মতাে আখের গােছাতে শুরু করে। ব্রাক্ষ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সম্প্রদায় নিজেদের আধিপত্য স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়। রৌপ্যমুদ্রার সংখ্যা কমে যায়। সব মিলিয়ে মাৎস্যন্যায়ের যুগে অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে।
বহিরাক্রমণ :-
বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিনে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জাতি বাংলা আক্রমণ করে। ৭২৫ খ্রিঃ হিমালয়ের শৈল্যবংশ পুণ্ড্রবর্ধন দখল করে।
যশােবধন ও মুক্তা পীড়ের আক্রমণঃ-
৭২৫-৭৩৫ খ্রিঃ কনৌজের যশােবর্মন পশ্চিম ও পূর্ব বাংলার কিছু অংশ দখল করে। যশােবর্মনের সভাকবি বাক্পতির ‘গৌড়বাহ’ গ্রন্থ থেকে এই বিজয়কাহিনি জানা যায়। কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্য মুজাপীডও জয়াপীড় যশােবর্মনকে পরাস্ত করে গৌড় দখল করেছিলেন বলে কেউ কেউ অনুমান করেন। তিব্বতে রাজা সুং-সান-গাম্পাে আসাম (অহােম) ও উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চল দখল করেছিলেন বলে ড. স্মিথ মনে করেন। বাংলার জনজীবন এই রাজনৈতিক হানাহানির যুগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
0 মন্তব্যসমূহ