বাংলার রাজাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলচনা কর । গােপালের নির্বাচন , গােপাল (৭৫০-৭৭০ খ্রিঃ), ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিঃ), দেবপাল (৮১০-৮৫০ খ্রিঃ),প্রথম মহিপাল (৯৮৮-১০৩৮ খ্রিঃ),দ্বিতীয় মহিপাল,কৈবর্ত বিদ্রোহ,রামপাল (১০৮৪-১১৩০ খ্রিঃ), নবম শ্রেণী


বাংলার রাজাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলচনা কর ।





বাংলার পাল রাজাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :-

গােপালের নির্বাচন :-

‘খালিমপুরের তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, মাৎস্যন্যায়ে অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলারপ্রকৃতিপুঞ্জ’ গােপালকে নির্বাচিত করেন। এই গােপালই ৭৫০ খ্রিঃ বাংলার সিংহাসনে আরােহণ করে সুশাসন ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক কিলহন, ড. বি. এন. মুখার্জি প্রমুখ মনে করেন, বাংলার প্রকৃতি হল সাধারণ মানুষ, মন্ত্রী, অমাত্য, সামন্ত কর্মচারীবৃন্দ। 

গুরুত্বঃ-


ড.আব্দুল মােমিন চৌধুরি তাঁর ‘ডাইন্যাস্টিক হিস্ট্রি অফ্‌ বেঙ্গল’ গ্রন্থে বলেন, গােপালের ন ছিল, 'কাল্পনিক ও অবিশ্বাস্য’ (fantastic and unreliable') কাহিনি। কারণগােপালের নির্বাচনের ব্যাপারে এমন নিয়মানুবর্তিতা বাংলার মানুষেরকাছে পাওয়া যাবে একথা বলা যুক্তিহীন। তবে ‘মল্লরসুল’, ‘দামােদরপুর’, ও ‘জয়নগর’ লিপি থেকে জানা যায়, সামন্ত কর্মচারীরা স্বার্থপরতা ও ব্যক্তিগত লােভলালসা ত্যাগ করে সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গােপালকে নির্বাচন করেছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার গােপালের এই সিংহাসনলাভের মধ্য দিয়ে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। আমল পরিবর্তনকে ইংল্যান্ডের রক্তপাতহীন বিপ্লব’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।

গােপাল (৭৫০-৭৭০ খ্রিঃ):-

আদি পরিচয়ঃ-


জাতিতে ক্ষত্রিয় হলেও কোনাে রাজবংশজাত ছিলেন কিনা সন্দেহ আছে। গােপালের পিতার নাম বপ্যাট ও পিতামহ দয়িতবিষুর বিশেষ পরিচয় আদি পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে স্ত্রী দেদ্দাদেবী ছিলেন সম্রান্ত বংশের রাজকন্যা। লামা তারানাথ পালদের ক্ষত্রিয় বললেও ‘আমঞ্জুশ্ৰীমূলকল্পে’ পালদেরকে ‘দাসজীবীণঃ’ বা দাসবংশীয় শুদ্র বলা হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যাকর নন্দী পালদের সমদ্রকুলােদ্ভব বা সমুদ্র থেকে উদ্ভূত বলেছেন। 

 কৃতিত্বঃ-


গােপাল কুড়ি বছর রাজত্ব করেছিলেন। এই সময়কালের মধ্যে তিনি শান্তি শৃঙ্খলা । প্রতিষ্ঠা করে বাংলার রাজনীতিতে ঐক্য ও সংহতি এনেছিলেন। মুঙ্গের লিপি থেকে জানা যায়, গােপাল সমুদ্রের উপকূল পর্যন্ত সাম্রাজ্যবিস্তার করেছিলেন। কৃতিত্ব। তাঁর সবচেয়ে বড়াে কৃতিত্ব হল স্বৈরাচারী ও ‘কামাকারী’ (অরাজকের স্রষ্টা)-দের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচিয়েছিলেন। খালিমপুর লিপি থেকে জানা যায়, ৭৭০ খ্রিঃ মৃত্যুর আগে গােপাল বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে ‘পরম সৌগত’ উপাধি নিয়েছিলেন।

ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিঃ):-

গােপালের মৃত্যুর পর (৭৭০ খ্রিঃ) তার সুযােগ্য পুত্র ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন। গুজরাটি কবি সােঢ্‌ঢলের ‘উদয় সুন্দরী’ কথাকাব্যে ধর্মপালের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে ‘উত্তরাপথস্বামীন’ বলা হয়েছে।




রাজ্যজয়ঃ-


ত্রিশক্তির দ্বন্দ্বের যুগে ধর্মপাল প্রতিহাররাজ, বৎসরাজ ও দ্বিতীয় নাগভট্ট এবং রাষ্ট্রকুটরাজ ধ্রুব ও তৃতীয় গােবিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সফল হননি ঠিকই, কিন্তু ভাগ্যগুণে কনৌজ। ও গাঙ্গেয় উপত্যকার এক বিস্তীর্ণ স্থান দখল করেন। রাষ্ট্রকূট রাজা দক্ষিণে ফিরে গেলে ধর্মপাল কনৌজের সিংহাসন থেকে ইন্দ্রায়ুধকে অপসারিত করে নিজের অনুগত সামন্তকর্মী। চক্ৰায়ুধকে কনৌজের শাসনভার দেন। ধর্মপাল কনৌজ অতিক্রম করে হিমালয়ের কেদারতীর্থ (গাড়ােয়াল) থেকে গােকর্ণ (নেপাল) পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। খালিমপুর তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, সমগ্র উত্তর ভারত জয়ের পর কনৌজে আয়ােজিত এক দরবারে উত্তর ভারতের বহু সামন্তরাজা মপালের প্রতি বশ্যতা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন।  এঁদের মধ্যে (১) ভােজ (বেরার), 

(২) মৎস্য (জয়পুর ও আলওয়াল), 

(৩) মদ্র (মধ্য পাঞ্জাব), 

(৪) কুরু, (পূর্ব পাঞ্জাব ও থানেশ্বর), 

(৫) কীর (পাঞ্জাবের কাংড়া অঞ্চল), 

(৬) যবন (সিন্ধুর মুসলিম রাজ্য), 

৭) যদু (সৌরাষ্ট্র অঞ্চল), 

(৮) গাম্পার (পূর্ব পাঞ্জাব), 

(৯) অবন্তী (রাজপুতানা) প্রভৃতি রাজ্যের রাজারা বিশেষ উল্লেখযােগ্য।

অন্যান্য কৃতিত্বঃ-

 ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, উত্তর ভারতের এক বিশাল সাম্রাজ্যের উপর ধর্মপাল আধিপত্য স্থাপন করলেও একমাত্র বাংলা ও বিহারে তিনি প্রত্যক্ষ শাসনব্যবস্থা গড়ে তলেছিলেন। সার্বভৌম শক্তির প্রতীক হিসাবে ধর্মপাল ‘পরমেশ্বর পরম ভটাচ মহারাজাধিরাজ’ উপাধি নিয়েছিলেন। রাষ্ট্রকূটরাজ তৃতীয় গােবিন্দের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে তার কন্যা রন্নাদেবীকে বিবাহ করে ধর্মপাল কূটনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে তাঁর সাফল্যের পিছনে তার ভাই বাক্‌পাল ও ব্রাক্ষণমন্ত্রী গর্গভট্টের অবদান অপরিসীম। ধর্মপালের গুরু বৌদ্ধ পণ্ডিত হরিভদ্র তাঁকে বৌদ্ধধর্মে অনুরাগী করে তুলেছিলেন। তাই ধর্মপাল বিক্রমশীলা মহাবিহার, সােমপুর বিহার ও ওদন্তপুরী বিহার নির্মাণ করে বৌদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার পথ প্রশস্ত রেখেছিলেন। সাহিত্য, চর্যাপদ, শিল্প-স্থাপত্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নতির মাধ্যমে বাংলার জাতীয় জীবনে নতুন সূর্যোদয় ঘটিয়েছিলেন। তাই ড. আর. সি. মজুমদার “ধর্মপালের রাজত্বকে বাঙালি জীবনের সপ্রভাত” বলে সঠিক মূল্যায়ন করেছেন। 

দেবপাল (৮১০-৮৫০ খ্রিঃ) :-


ধর্মপালের পুত্র দেবপাল ৮১০ খ্রিঃ বাংলার সিংহাসনে বসেন। পিতার ন্যায় তিনিও ৪০ বছর রাজত্ব করেন (৮৫০ খ্রিঃ)। একজন রণনিপুণ বীর যােদ্ধা হিসাবে দেবপাল ‘রক্ত ও লৌহনীতি’ (Blood and Iron Policy')। প্রয়ােগ করে বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করেছিলেন।

রাজ্যজয়ঃ-


‘বাদল প্রশস্তি’ ও হরগৌরী স্তম্ভলিপি’তে উল্লেখ আছে, উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে। বিন্ধ্যপর্বত ও পূর্বে আসামের শেষপ্রান্ত থেকে পশ্চিমে সমুদ্রতীর পর্যন্ত অঞল দেবপালের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। দেবপালের মন্ত্রী দৰ্ভপাণি কেদারমিশ্রের কুট পরামর্শে তিনি অতি সহজেই প্রাগজ্যোতিষপুর (আসাম) ও উৎকল (ওড়িশা) নিজের করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। কেদার মিশ্রের পুত্র গুরব মিশ্রের লিপি থেকে জানা যায়, হুন, গুর্জর, দ্রাবিড় ও কম্বােজদের পরাস্ত করে দেবপাল সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠেন। ত্রিপাক্ষিক দ্বন্দ্বের সময় প্রতিহাররাজ প্রথম ভােজ ও রাষ্ট্রকুটরাজ প্রথম অমােঘবর্ষকে তিনি পরাজিত করেছিলেন, পাণ্ডারাজ্যের দ্রাবিড় রাজা শ্রীমারশ্রীবল্লভকেও দেবপাল পরাস্ত করেছিলেন। ড. মজুমদারের মতে, এইভাবে বিন্ধ্যর দক্ষিণে কর্ণাটক ও পান্ডারাজ্য দেবপাল জয় করলেও পিতার নীতি মেনে ওইসব রাজ্যের স্বাধীনতা পুরােপুরি হরণ করেননি।

বিদেশনীতিঃ-


ভারতের বাইরে যবদ্বীপ, সুমাত্রা, মালয় প্রভৃতি দ্বীপে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।। সুমাত্রার শৈলেন্দ্রবংশীয় রাজা বালপুত্রদেব দেবপালের অনুমতিক্রমে পাঁচটি গ্রাম নিয়ে নালন্দায় একটি বৌদ্ধমঠ নির্মাণ করেছিলেন। আরবীয় পর্যটক সুলেমান দেবপালের সৈন্যবাহিনীর উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন। তবে তাঁর সংস্কৃতিবােধেরও ঘাটতি ছিল না। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে তিনি প্রচুর। অর্থও ব্যয় করেছিলেন। ড. আর. সি. মজুমদার বলেছেন, “ধর্মপাল ও দেবপালের রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা মহান যুগ।”

রাজনৈতিক বিপর্যয়ঃ-


৮৫০ খ্রিঃ দেবপালের মৃত্যুর পর প্রথম বিগ্রহপাল (৮৫০-৮৫৪ খ্রিঃ), নারায়ণপাল (৮৫৪-৯০৮ খ্রিঃ), রাজ্যপাল, দ্বিতীয় বিগ্রহপাল একে একে বাংলার সিংহাসনে বসেছিলেন। এঁদের রাজত্বকালে ক্রমাগত উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বের সুযােগে প্রতিহার, রাষ্টকুট, কলচুরি, কম্বােজ ও চান্দেল্লদের আক্রমণে পালদের কেন্দ্রীয় রাজশক্তি মগধের সংকীর্ণ এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এইসময়। লালদের সামগ্রিক জীবনে চরম দুর্দিন ঘনিয়ে আসে।

প্রথম মহিপাল (৯৮৮-১০৩৮ খ্রিঃ) :-

কৃতিত্বঃ-


এই দুর্দিনে প্রথম মহিপাল শক্ত হাতে হাল ধরে পাল সাম্রাজ্যের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করেন। তিনি কম্বােজ ও চন্দ্রদের কাছ থেকে উত্তরবঙ্গ, পূর্ব পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ এবং উত্তর দক্ষিণ বিহার পুনরুদ্ধার করেন। বারাণসী সারনাথ পর্যন্ত নিজের ক্ষমতাবৃদ্ধি করেন। তাঁর রাজত্বকালে প্রথম রাজেন্দ্র চোল বাংলা আক্রমণ করলেও (১০২১-২৩ খ্রিঃ) কোনাে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেননি। তবে ১০২৬ খ্রিঃ গাঙ্গেয়দেব কলচুরির আক্রমণে প্রথম মহিপাল পরাস্ত হন। কিন্তু মহিপালের অসামান্য সামরিক দক্ষতার গুণে পাল সাম্রাজ্য পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল বলে তাঁকে ‘দ্বিতীয় পাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা’ বলা হয়। মহিপাল কাশীর হিন্দুমন্দির এবং সারনাথ ও নালন্দার বৌদ্ধমঠ দুটি নির্মাণ করান। এছাড়া তিনি বহু পুষ্করিণী খনন ও শহর নির্মাণ করেছিলেন। ড. আর. সি. মজুমদার তাঁর ‘বাংলার ইতিহাস’ গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, “মােটের উপর মহিপালের রাজ্যে বাংলার । সকল দিকেই এক নতুন জাতীয় জাগরণের আভাস পাওয়া যায়।”


দ্বিতীয় মহিপাল :- 


প্রথম মহিপালের রাজত্বকালে, তার পৌত্র দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালের কিছু আগে কলচুরিরাজ লক্ষ্মীকর্ণ, ওড়িশার রাজা মহাশিবগুপ্ত যযাতি ও চালুক্যরাজ প্রথম সােমেশ্বরের বাংলা আক্রমণে পাল সাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। 


কৈবর্ত বিদ্রোহঃ-


তার উপর দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালে উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্রভূমিতে ভীম ও দিব্য বা দিব্যকের নেতৃত্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ শুরু হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।  পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ড. এস. পি. লাহিড়ী প্রমুখের মতে, কৈবর্ত হল কৃষিজীবী ও যুদ্ধপ্রিয় সম্প্রদায়। ঐতিহাসিক গ্রিয়ারসন ‘বেঙ্গল গেজেটিয়ারে’ বলেছেন, বাংলার চাষি ও মাহিষ্যরা কৈবর্ত। ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে কৈবৰ্তরা সবাই মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের। দ্বিতীয় মহিপাল এই বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে নিহত হন। ফলে কৈবৰ্তরা উত্তরবঙ্গে একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তােলে।

রামপাল (১০৮৪-১১৩০ খ্রিঃ) :-

কতিত্বঃ-


দ্বিতীয় মহিপালের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই রামপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন। তাঁর সভাকবি সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিত’ (শ্লেষকাব্য) রামপালেরই জীবনকাহিনিমাত্র। এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়, কৈবর্ত বিদ্রোহ দমন করতে সুকৌশলে তিনি বহু সামন্তরাজাকে নিজ পক্ষে আনেন। এইসব রাজাদের নামের একটি তালিকা রামচরিতে আছে—

(১) দন্তভুক্তি বা দাঁতনের রাজা জয় সিংহ,

(২) বিষ্ণুপুর বা কোটাটবির রাজা বীরগণ

(৩) অপারমন্দা বা হুগলির রাজা লক্ষ্মীশুর

(৪) কজঙ্গল বা রাজমহলের রাজা নরসিংহ, 

(৫) কৌশাম্বী বা রাজশাহির দবোরাপবর্ধন প্রমুখ তেরােটি রাজ্যের রাজা। এঁরা প্রত্যেকেই রামপালকে পাহায্য করেছিলেন। এছাড়া মাতুল রাষ্ট্রকুটরাজ তিলক মথন বা মহানদেব বরেন্দ্রভূমি শুনরুদ্ধারে রামপালকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন। কামরূপ ও পূর্ববঙ্গের বর্মনরাজারা তাঁর কাছে পরাস্ত হন। গাহড়বাল ও চালুক্যবংশীয় রাজারাও তার কাছে পরাজয় নেন। রামপাল বন্দি কৈবর্ত বিদ্রোহীদের প্রকাশ্যে বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে গনহত্যা চালিয়েছিলেন। কলিঙ্গর রাজা অনন্তবর্মা চোড়গঙ্গকে রামপাল পরাস্ত করতে পারেননি ।তবে অনন্তবর্মাকে চাপে রাখতে তিনি সুদূর দক্ষিণের চোলরাজ কুলােতুঙ্গের সঙ্গে মিএতা স্থাপন করেছিলেন। রামপালের নবনির্মিত রাজধানীর নাম ছিল রামাবতী। রামপাল ছিল বাংলার শেষ শক্তিশালী পালরাজা। দীর্ঘ ৫৩ বছর রাজত্বের পর ৮০ বছর বয়সে গঙ্গা ঝাঁপ দিয়ে তিনি প্রাণ বিসর্জন দেন বলে রামচরিতে উল্লেখ আছে। রামপালের মতন সঙ্গে-সঙ্গেই পাল সাম্রাজ্যের গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়ের চিরসমাপ্তি ঘটে।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ