হিউয়েন সাঙের বিবরণী সম্পর্কে আলোচনা করো।
হিউয়েন সাঙের বিবরণী:-
হিউয়েন সাঙ (৬০৫-৬৬৪ খ্রিঃ) চিনের এক সম্ভ্রান্ত নবারে জন্মগ্রহণ করেন ৬০৫ খ্রিঃ। চিনের ‘সাং-লুই ইয়াং’ নামে এক বৌদ্ধমঠের সন্ন্যাসী ছিলেন । তাঁর আকর্ষণীয় দেহসৌষ্ঠব, মধুর কণ্ঠস্বর ও তীব্র স্মৃতিশক্তির জন্য বৌদ্ধ পণ্ডিত হিসাবে তার বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। তাই চিনের রাজার অনুমতি নিয়ে হিউয়েন সাঙ। ৬২৯ খ্রিঃ বুদ্ধের জন্মস্থান পুণ্যভূমি ভারত পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
বিভিন্ন দেশ অতিক্রমঃ-
বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে তুরফান, কুচি, অগ্নি, অক্ষু, নুজিকিল, তাসখন্দ বা চজ, ফরগনাহ, সুতৃষ্ণ, মখিয়ান, সমরখন্দ, কাপিশা, কাশগড়, খােটান, ইয়ারখন্দ প্রভৃতি রাজ্য অতিক্রম করে খাইবার গিরিপথ হয়ে পেশােয়ারের । মধ্য দিয়ে হিউয়েন সাঙ প্রথমে ৬৩০ খ্রিঃ কাশ্মীরে এসে উপস্থিত হন। মােট ১৪ বছর ভারতে থাকার পর ৬৪৫ খ্রিঃ ওই একইভাবে দুর্গম মরুপথ অতিক্রম করে চিনে ফিরে আসেন। তবে সঙ্গে বেশ কিছু বৌদ্ধমূর্তি ও ৬৫৭টি বৌদ্ধপুথি নিয়ে যান। দেশে ফিরে তিনি কয়েকটি বই লিখেছিলেন। তার মধ্যে তাঁর ‘সি ইউ-কি’ (পশ্চিম দেশের বৃত্তান্ত) গ্রন্থ বিশেষ উল্লেখযােগ্য।
শিয়ালকোটে পণ্ডিত বিনীতপ্রভাবের কাছে হীনযান বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা নেন। ৬৩৫-৬৪৩ খ্রিঃ পর্যন্ত এই আট বছর তিনি হর্ষের রাজধানী কনৌজে ত্রিপিটক অধ্যয়ন করেন। ভারতের মধ্যে যেসব স্থানে হিউয়েন সাঙ্ গিয়েছিলেন তার মধ্যে লখমন, জালালবাদ হিউয়েন সাঙ । (নগর হার), গান্ধার, পুরুষপুর বা পেশােয়ার, সােয়াত উপত্যকা, ডরেল, তক্ষশিলা, কাশ্মীর, মথুরা, থানেশ্বর, সুবর্ণ গােত্র (স্ত্রীশাসিত রাজ্য), কনৌজ, কৌশাম্বী, কপিলাবস্তু, কুশিনগর, বৈশালী, চম্পা, কামরূপ, সমতট, কজঙ্গল (রাজমহলের নিকট), তাম্রলিপ্ত, কর্ণসুবর্ণ, ব্রোচ, বলভী,কলিঙ্গ, কঙ্গোদ, মহারাষ্ট্র (দ্বিতীয় পুললাকেশির রাজ্য) প্রভৃতি প্রধান।
বিবরণীঃ-
হিউয়েন সাঙের বিররণীতে কনৌজের রাজা হর্ষবর্ধনকে উদার, কর্তব্যপরায়ণ, ন্যায়নিষ্ঠ, সংস্কৃতিমনস্ক, প্রজাবৎসল শাসক বলা হয়েছে। হিউয়েন সাঙের মতে, এখানে বহু বৌদ্ধমঠ ও ২০০ দেবদেবীর মন্দির ছিল। তাছাড়া এখানে পান্থশালা, বিশ্রামাগার ও চিকিৎসাকেন্দ্রও ছিল। দেশে চুরি- ডাকাতির উপদ্রব ভালােই ছিল। হিউয়েন সাঙ নিজে বেশ কয়েকবার দস্যুর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন। হিউয়েন সাঙ পাটলিপুত্রের পরিবর্তে কনৌজ নগরীকে ভারতের এক জনবহুল, সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ নগরী বলেছেন। ভারতীয় জনজীবনের উচ্চনৈতিক আদর্শকে ফা-হিয়েন বা মেগাস্থিনিসের মতাে হিউয়েন সাঙুও প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, ভারতীয়রা ন্যায়পরায়ণ, সরল স্বভাবের ও সত্যবাদী। নীচু শ্রেণির মানুষরা শহরের বাইরে বাস করত। সমাজে জাতিভেদ প্রথা, সতীদাহ প্রথা, বিধবাবিবাহ, বাল্যবিবাহও প্রচলিত ছিল। নারীদের শাস্ত্রপাঠ ও অসবর্ণ বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল।
0 মন্তব্যসমূহ