মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় বা ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো | মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় বা ধ্বংসের কারণ, নবম শ্রেণী

মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় বা ধ্বংসের কারণ  সম্পর্কে আলোচনা করো | নবম শ্রেণী 

মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় বা ধ্বংসের কারণ:- 


প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণের ঘাতপ্রতিঘাতে এই সাম্রাজ্য একসময় নিশ্চিহ্ন  হয়ে যায়। 



(১ ) বিশালতা:-

সুদূর কাবুল-কান্দাহার থেকে পূর্ববঙ্গের শেষপ্রান্ত এবং উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে মহিশূর পর্যন্ত এক বিশাল ভূখণ্ড নিয়ে মােগল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এত বিশাল সাম্রাজ্যের সর্বত্র যােগাযােগ রক্ষা করে সুশাসন পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। 

(২) উত্তরাধিকার আইনের অস্পষ্টতা:-


একসময় জ্যেষ্ঠপুত্রের উত্তরাধিকার আইন (Law of primogenature) কার্যকারী ছিল। কিন্তু মােগল যুগে সম্রাটের মৃত্যুর পর কে সিংহাসনে বসবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনাে আইন। না থাকায় সম্রাটের পুত্র, পৌত্র, আত্মীয়স্বজন, আমির-ওমরাহ সবাই সিংহাসনলাভের । লড়াইতে মেতে উঠত। শাহজাহানের পুত্র দারা, সুজা, মুরাদ ও ঔরঙ্গজেব এবং ঔরঙ্গজেবের পুত্র মুয়াজ্জেম, আজম শাহ ও কামবক্সের মধ্যে সিংহাসনলাভের লড়াইতে। তীব্র ভাতৃঘাতী অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।

 (৩) দুর্বল উত্তরাধিকার:-


ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী সম্রাটদের সবাই শাসনকার্য পরিচালনা অপেক্ষা বিলাস, ব্যভিচার ও মদ্যপানে মত্ত ছিলেন। অধিকাংশ দুর্বল সম্রাট ছিলেন অতিরিক্ত মাত্রায়) ইন্দ্রিয়পরায়ণ। উদাহরণস্বরূপ রফি-উদ-দৌলা ও রফি-উদ-রজাৎ অতিরিক্ত মদ্যপান করেই অকালে মারা যান। এই যুগের বেশিরভাগ রঙ্গিলা সম্রাটদের দায়িত্বহীনতা মােগল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী।

(৪) সামরিক শক্তির দুর্বলতা:-


মােগলদের সামরিক বাহিনীতে বেশিরভাগ সেনা ছিল তুর্কি। যুদ্ধই তাদের পেশা ছিল। কিন্তু একসময় যুদ্ধের প্রয়ােজন ফুরিয়ে গেলে তুর্কি সেনারা অলস ও আরামপ্রিয় হয়ে পড়ে। এইভাবে সামরিক শক্তির দুর্বলতার ফলে মােগল। যুগের সামন্ততান্ত্রিক শাসনকাঠামাে ভেঙে পড়ে।

(৫) অভিজাতদের দায়িত্বহীনতা:-

ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী সম্রাটদের দুর্বলতার সুযােগে উচ্চ পদস্থ আমির-ওমরাহ প্রভৃতি অভিজাত সম্প্রদায় ক্রমশ কর্তব্যকর্মে অবহেলা করতে শুরু করে। 

(৬) দরবারে দলাদলি:-


ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মােগল রাজদরবারে ইরানি, তুরানি ও হিন্দুস্থানি গােষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থদ্বন্দ্ব তীব্র রূপ নিয়েছিল। ঐতিহাসিক ড. সতীশচন্দ্র তাঁর 'পাটিজ অ্যান্ড পলিটিক্স-১৭০৭-৪০' গ্রন্থে বলেছেন, গােষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দরবারি রাজনীতির পরিবেশ। বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। এইসব গােষ্ঠীর প্রধানদের মধ্যে সৈয়দ হােসেন আলি, সৈয়দ আবদুল্লা, চিন কুলিজ খাঁ, জুলফিকার খাঁ প্রমুখ সংকীর্ণ ও স্বার্থপর রাজনীতিতে মেতে। উঠেছিল।

 (৬)বৈদেশিক আক্রমণ:-


১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে মােগল সম্রাট মহম্মদ শাহের আমলে পারস্যের অধিপতি নাদির শাহ-এর ভারত আক্রমণে দিল্লি ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। তিনি মহামূল্য কোহিনুর হীরকখণ্ড ও ময়ূর সিংহাসন নিয়ে দেশে পালিয়ে যান। আর ১৭৪৭-১৭৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেশ কয়েকবার আফগান অধিপতি আহম্মদ শাহ আবদালির ভারত আক্রমণে মােগল  সাম্রাজ্যে  পতন ঘটে |  সর্বোপরি আক্রমণ  মোগল সাম্রাজ্যের শেষ সমাধি তৈরি করেছিল |




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ