মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় সম্পর্কে আলোচনা করো | আঞ্চলিক বিদ্রোহ: মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় (Regional revolts :Decline of Mughal Empire), মারাঠা বিদ্রোহ, শিখ বিদ্রোহ, রাজপুত বিদ্রোহ, বুন্দেলা বিদ্রোহ, সৎনামী বিদ্রোহ, জাঠ বিদ্রোহ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের বিদ্রোহ, উত্তর-পূর্ব সীমান্তেরবিদ্রোহ, নবম শ্রেণী

মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় সম্পর্কে আলোচনা করো | নবম শ্রেণী

আঞ্চলিক বিদ্রোহ: মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় (Regional revolts :Decline of Mughal Empire):- 


মােগল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযােগ হায়দ্রাবাদ, মহিশূর, বাংলা, অযােধ্যা ইত্যাদি একে একে আঞ্চলিক বিদ্রোহের দ্বারা স্বাধীন রাজ্যরূপে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালায়। একসময় তা সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ডেকে আনে। তবে ঔরঙ্গজেবের আমলের কিছু আঞ্চলিক বিদ্রোহ মােগল সাম্রাজ্যের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল।




উত্তর-পূর্ব সীমান্তেরবিদ্রোহঃ-


ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে দাউদ খাঁ পালামৌ জয় করলে (১৬৬১ খ্রিঃ) উত্তর-পূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলি বিদ্রোহ শুরু করে। সীমান্তের কোচ ও আহােম  জাতির আক্রমণ প্রতিহত করতে ঔরঙ্গজেব সেনাপতি মিরজুমলাকে পাঠান (১৬৬১ খ্রিঃ)।

উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের  বিদ্রোহঃ-


ঔরঙ্গজেব ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের আফগান উপজাতিদের স্বায়ত্তশাসন। কেড়ে নিলে তারা মােগল সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ হানে। বিশেষত দুর্ধর্ষ আফগান উপজাতি ইউসুফজাই (১৬৬৭ খ্রিঃ), আফ্রিদি (১৬৭২ খ্রিঃ) ও খট্টক (১৬৭৪ খ্রিঃ) জাতির আক্রমণে শান্তি ব্যাহতহয়। ঐতিহাসিক  যদুনাথ সরকার মনে করেন এই উপজাতি বিদ্রোহ মােগল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তীব্র করে তুলেছিল। 

জাঠ বিদ্রোহঃ-


 ১৬৬৯ খ্রিঃ মথুরার অত্যাচারী ফৌজদার আবদুল নবির বিরুদ্ধে জমিদার গােকলা জাঠ বিদ্রোহ শুরু করেন। গােক্‌লা যুদ্ধে নিহত হলে রাজারাম (১৮৮৬  খ্রিঃ) এবং তার পর চূড়ামন জাঠ বিদ্রোহের নেতৃত্ব হাতে নেন। বহু কৃষক ও জমিদার এইসময় জাঠ বিদ্রোহে অংশ নেয়। ফলে জাঠনেতা চূড়ামন শেষ পযন্ত ভরতপুরে স্বাধীন রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হন। 


সৎনামী বিদ্রোহঃ-


১৬৭২ খ্রিঃ সামি বিদ্রোহের নেতা গরিবদাস হাড়া মথুরার নারনুলে বিদ্রোহ শুরু  করেন। বহু হিন্দু-মুসলিম কৃষক ও ছােটো ব্যবসায়ী এই বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল। এই বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করে মােগল বাহিনী। 

বুন্দেলা বিদ্রোহঃ-


ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরােধিতা করেই মূলত এই বিদ্রোহ শুরু হয়। বুন্দেলারা আসলে রাজপুতদের একটি গােষ্ঠী। ধর্মীয় কারণে বুন্দেলারাজ চম্পতরায় প্রথম বুন্দেলা বিদ্রোহ শুরু করেন, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তারপর তাঁর পুত্র ছত্রশাল স্বাধীন হিন্দুরাজ্য গড়ে তােলার লক্ষ্যে ১৬৭১ খ্রিঃ পীড়িত। হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তােলেন। ১৭৩১ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি মালবে স্বাধীন। হিন্দুরাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিলেন।

রাজপুত বিদ্রোহঃ-


প্রথম দিকে ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে রাজপুতদের ভালাে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৬৭৮ খ্রিঃ মাড়ােয়ারের রাজা যশােবন্ত সিংহের মৃত্যুর পর ঔরঙ্গজেব ইন্দর সিংহ নামে যশােবন্তের এক আত্মীয়কে মাড়ােয়ারের রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দিলে রাজপুতানার অনেকে তা মেনে নেননি। তারা যশােবন্ত সিংহের বিধবা পত্নীর সদ্যোজাত যমজ শিশুদ্বয়ের মধ্যে একমাত্র জীবিত পুত্র অজিত সিংহকে সিংহাসনে বসানাের দাবি করলে, ঔরঙ্গজেব অজিত সিংহকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার কথা বলেন। এতে ক্ষুব্ধ রাঠোরের সর্দার দুর্গাদাস এবং মেবারের রানা রাজসিংহ ও তাঁর পুত্র জয়সিংহ ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলতে থাকা রাজপুত বিদ্রোহকে ঔরঙ্গজেব দমন করতে পারেননি।

শিখ বিদ্রোহঃ-


সম্রাট জাহাঙ্গির পঞ্চম শিখগুরু অর্জুনকে হত্যা এবং ১৬৭৫ খ্রিঃ ঔরঙ্গজেব নবম শিখগুরু তেগবাহাদুরের শিরচ্ছেদ করলে শিখদের মনে অসন্তোষ দানা বাঁধে। দশম শিখগুরু গােবিন্দ সিংহ তাই ‘খালসা’ বাহিনী গঠন করে আজীবন মােগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিলেন। গুরু গােবিন্দর মৃত্যুর পর। তাঁর অনুগামী বান্দা মােগলবিরােধী শিখ বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিলেন। 

মারাঠা বিদ্রোহঃ-


বিজাপুরের সুলতান সেনাপতি আফজল খাঁকে ১০,০০০ সৈন্য ও কিছু কামানসহ শিবাজির বিরুদ্ধে পাঠান (১৬৫৯ খ্রিঃ)। কিন্তু গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে শিবাজি তাঁকে কোণঠাসা করে। পরে শিবাজি লােহার জাল-বর্ম পরে 'বিছুয়া’ নামে  ছুরি ও ‘বাঘনখ’ নামে ধারালাে অস্ত্র নিয়ে আফজল খাঁকে আলিঙ্গনের ছলে হত্যা করেন। এবার ঔরঙ্গজেব তাঁর মাতুল ও দাক্ষিণাত্যের সুবেদার শায়েস্তা খাঁকে শিবাজিকে দমনের জন্য প্রেরণ করেন (১৬৬০ খ্রিঃ)। ১৬৬৫ খ্রিঃ ২৬ জুন শিবাজী জয়সিংহর সঙ্গে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন। ১৬৭৪ খ্রিঃ রাজধানী রায়গড়ে শিবাজির রাজ্যাভিষেক হয়। তখনই তিনি ‘ছত্রপতি’ এবং ‘গাে-ব্রাহাণ প্রজাপালক’ উপাধি লাভ করেন। ১৬৮০ খ্রিঃ ১৬ এপ্রিল মাত্র ৫৩ বছর বয়সে শিবাজির মৃত্য হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ