সুলতানি ও মােগল যুগে ভারতের সমন্বয়ী সংস্কৃতি (Integrated Culture of! India in the Sultanate and Mughal Periods)। নবম শ্রেণী

সুলতানি ও মােগল যুগে ভারতের সমন্বয়ী সংস্কৃতি (Integrated Culture of! India in the Sultanate and Mughal Periods):-


দীর্ঘ পাঁচশাে বছরের সুলতানি ও মােগল শাসনে এক সমন্বয়ী সংস্কৃতির জন্ম হয়েছিল। ‘উরস’, ‘নওরােজ’, ‘হােলি’, ‘মহরম’, ‘শবেবরাত’, ‘দীপাবলি’, ‘বসন্ত পঞমী’, ‘শিবরাত্রি’ ইত্যাদি উৎসবকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয় ঘটেছিল। ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদ ইসলামের এই প্রভাবকে স্বীকার করেছেন ("Wrought great changes in the religious and social outlook of the people of India".)। ভাষা, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, সমাজ, বিজ্ঞান প্রভৃতি সবকিছুর অগ্রগতিতে সব জাতিবর্ণ বিশেষত হিন্দু-মুসলিম সংহতি ভারতীয় সংস্কৃতিতে এক চিরন্তন বন্ধন সৃষ্টি করেছিল। বহু হিন্দু স্বেচ্ছায় ব্রাত্মণ্যবাদের কবল থেকে মুক্তি পেতে ইসলামেরু সাম্যবাদে আশ্রয় নিয়েছিল। বহু হিন্দু রাজ্য অন্য হিন্দু রাজ্যকে শায়েস্তা করতে মুসলিম শক্তির সাহায্য নিয়েছে। কিন্তু সুলতান ব্রাত্মণ্যবাদে অনুগত হয়ে ব্রাক্ষ্মণদের উপর থেকে “জিজিয়া কর’ তুলে দেন। তাঁরা গোঁড়া উলেমাদের পছন্দ করেননি। তখন হিন্দুত্বের পৃথক আধিপত্য ছিল না বলে হিন্দু-মুসলিম মিলিতভাবে সত্যপীরের পূজা করেছে। মুসলিমদের জ্যোতিষ ও বিজ্ঞানশাস্ত্রের অনেক কিছু হিন্দুরা নিয়েছে। আরবি ও ফার্সি ভাষা থেকে এলেও মূলত হিন্দু-মুসলিম মিলনের জন্যই উর্দু ভাষার সৃষ্টি হয়। মালিকি মহম্মদ জায়সি হিন্দিতে ‘পদ্মাবৎ' কাব্য লেখেন। এর বাংলা অনুবাদ করেন আলাওয়াল। এছাড়া বিনতুঘলক’ ‘হােলি উৎসব’-এ যােগ দিয়েছিলেন। আলাউদ্দিন খলজি জৈনাচার্য মহাসেন। পর্ণচন্দ্র (দিগম্বর) ও রামচন্দ্র সরি (শ্বেতাম্বর)-কে ধর্মালােচনার জন্য আমন্ত্রণ করেছিল। বহু সুলতান উচ্চপদে হিন্দুদের নিয়ােগ করেছিলেন। বাবর ভারতীয় মুসলিমদের এই হিন্দুস্থানি রীতিনীতি দেখে অবাক হয়েছিলেন।



        হিন্দুপ্রধান দেশে মুসলিম শাসন স্থাপিত হবার পর খুব স্বাভাবিক কারণেই হিন্দদের। সহযােগিতা ও পারস্পরিক সহাবস্থানের ফলে সাংস্কৃতিক ভাববিনিময় ঘটে।* কাশ্মীরের আকবর’ নামে পরিচিত জইন উল আবেদিন সমন্বয়ী সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ অবদান। রেখেছিলেন। তিনি গীতা’ ও ‘রাজতরঙ্গিণী’-গ্রন্থের ফার্সি অনুবাদ করান। অন্যদিকে। বাংলার আকবর’ নামে পরিচিত আলাউদ্দিন হােসেন শাহ 'রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত'-এস সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করান। এইভাবে সাংস্কৃতিক সমন্বয়ও গড়ে উঠেছিল। বশেষে বলতেই হবে যে সুফিবাদ ও ভক্তিবাদ-এর মাধ্যমে সমন্বয়ের পথ মসৃণ হয়েছিল।Communalism & the writing of the History of India গ্রন্থে বিপানচন্দ্র, রােমিলা থাপার প্রমুখ  ঐতিহাসিক সুলতানি যুগের হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক সমন্বয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। স্যার জন মার্শাল বলেন, “মানবজাতির ইতিহাসে এমন সংমিশ্রণ কমই দেখা যায়।” ঐতিহাসিক কালীকিঙ্কর দত্ত বলেন, এই সমন্বয় নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল। ("springing up new styles of art architecture and music") ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ