রণজিৎ সিংহ
দিল্লির সুলতানী আমলের শেষের দিকে গুরু নানক ‘শিখ’ ধর্ম প্রবর্তন করেন । ‘শিখ’ শব্দের অর্থ শিষ্য। শিখেরা বীরের জাতি। ধর্ম ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তারা কখনও প্রাণ দিতে কুণ্ঠিত হয় নাই। গুরু অর্জুন সম্রাট্ জাহাঙ্গীরের আদেশে নিহত হয়েছিলেন। আওরঙ্গজেব গুরু তেগ বাহাদুরকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন। গুরু গােবিন্দ শিখদিগকে নূতন আদর্শে দীক্ষিত করেন। তাঁর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে শিখেরা দীর্ঘকাল মুঘল ও আফগানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। কাবুলের প্রবল পরাক্রান্ত অধিপতি আহম্মদ শাহ্ আবদালি বার বার পাঙ্গাব আক্রমণ করেও নির্ভীক শিখদের বশীভূত করতে পারেন নাই।
রণজিৎ সিংহ এক শিখ সর্দারের পুত্র ছিলেন। তাঁর বয়স যখন মাএ দশ বৎসর তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। অতি অল্প বয়সেই এক ক্ষুদ্র রাজ্যখণ্ড শাসনের ভার তাঁর উপর পড়ল। আকবর এবং শিবাজীর মতাে তিনিও লেখাপড়া শিখবার সুযােগ পান নাই, কিন্তু নিজের বাহুবলে ও বুদ্ধিকৌশলে তিনি একটি বৃহৎ স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেছিলেন।
রণজিৎ যখন পৈতৃক রাজ্যখণ্ডের অধিকারী হন তখন শিখদের মধ্যে ঐক্য ছিল না। কয়েকজন শিখ সর্দারের পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। রণজিৎ সিংহ কয়েকটি ক্ষুদ্র রাজ্য অধিকার করে শিখদের মধ্যে একতা থাপন করলেন। কিন্তু ইংরেজরা বাধা দেওয়ায় তিনি শতদ্রু নদী অতিক্রম করে পূর্বে পঞ্জাবে রাজ্যবিস্তার করতে পারেন নাই।
ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল ও কাশমীর তখন আফগানদের অধীন ছিল। রণজিৎ সিংহ দীর্ঘকাল তাদের সঙ্গে যা করে ঐ দুটি অঞ্চল অধিকার করেন। সীমান্তের দুর্দান্ত পার্বত্য জাতিগুলিও তাঁর শাসন মেনে নিয়েছিল।
রণজিৎ সিংহ অল্প বয়সে ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি করে কোম্পানির মিএ রুপে গণ্য হয়েছিলেন। তিনি কখনও কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে প্রবিত্ত হন নাই। ইংরেজরাও তাঁর স্বাধীনতা স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু তাঁর বংশধরগণ ইংরেজদের সঙ্গে সদ্ভাব রক্ষা করতে পারেন নাই। রণজিৎ সিংহের মৃত্যুর পর দশ বৎসরের মধ্যেই ইংরেজরা শিখ রাজ্য অধিকার করে নিয়েছিল।
খিস্টাব্দ
১৭৮০ রণজিৎ সিংহের জন্ম
১৭৯০ রণজিৎ সিংহের পিতার মৃত্যু
১৮০৯ রণজিৎ সিংহের সহিত ইংরেজদের সন্ধি
১৮৩৯ রণজিৎ সিংহের মৃত্যু
১৮৪৯ ইংরেজ কর্তৃক শিখ-রাজ্য অধিকার
0 মন্তব্যসমূহ