প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের প্রসার ও নগরের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করো , বাণিজ্য ও বিনিময় প্রথা, আমদানি রপ্তানি বানিজ্য, নগরের উত্থান, নবম শ্রেণি ।

প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের প্রসার : নগরের উত্থান (Expansion of trade in ancient India : Growth of towns):- 


বাণিজ্য ও বিনিময় প্রথাঃ-


দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যের জন্য সিন্ধু, যমুনা, গঙ্গা ও গােদাবরীই ছিল জলপথের প্রধান মাধ্যম। স্থলপথের ক্ষেত্রে ছিল গােরুরগাড়ি, ঘােড়ারগাড়ি। গাধা ও উট ছিল প্রধান পরিবহনের মাধ্যম। তক্ষশিলা, উজ্জয়িনী, কাশী, শ্রাবস্তী, চম্পা, অযােধ্যা, কাশ্মীর, মগধ, বঙ্গদেশ প্রভৃতি ছিল জনপ্রিয়  বাণিজ্যকেন্দ্র। সমুদ্রবন্দরের মধ্যে ভৃগুচ্ছ, সােপারা, কল্যাণ ও তাম্রলিপ্ত বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। এইসব বন্দর দিয়ে সমুদ্র বাণিজ্য চলত ব্রহ্লাদেশ, সিংহল, পশ্চিম এশিয়া,পারস্য উপসাগর, লােহিত সাগর, মিশর, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, চিন, উত্তর আফ্রিকা প্রভৃতি দেশের সঙ্গে। 


খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের ভারত-বােম বাণিজ্যে ‘রেশম পথের’ আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ছিল। স্থলপথে বণিকদের পথনির্দেশ দিতে ‘স্থল-নিয়ামক’ নামে কর্মচারী ছিলেন। ভারত থেকে এইসময় বহির্বিশ্বে রপ্তানি হত দামি পাথর, চামর,বস্ত্র, অভু মণিমুক্তা,  হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্র ইত্যাদি। এ যুগের ভাম্যমাণ বণিকদের ‘সার্থবাহ’ বলা হত। আর ধনী বণিকরা ‘শ্রেষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিল।



আমদানি রপ্তানি বানিজ্যঃ-


খ্রিস্টীয় দশম শতকে আবার ভারতের বহির্বাণিজ্য নবযৌবন লাভ করে। এইসময় ভারতে  সােনার আমদানি বাড়ে। পূর্ব উপকূলের সপ্তগ্রাম ও তাম্রলিপ্ত। বন্দর এবং পশ্চিম উপকূলের কাম্বে, দেবল, থানা, সােপরা, কুহল বন্দরগুলি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব লাভ করে। সিংহল, ব্ৰত্মদেশ, আফ্রিকা, কম্বােজ, চম্পা, মালয় উপদ্বীপের সঙ্গে ভারতের জলপথে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থলপথে চিন তিব্বত, নেপাল, ভুটান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য গড়ে ওঠে। চোল, পল্লব ও পাণ্ড্যরাজ্যের বণিকরা মহাবলীপুরম, কাবেরীপত্তনম ও কারিল বন্দর দিয়ে। বহির্বাণিজ্য চালাত। এই যুগের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে চন্দনকাঠ, মশলাদ্রব্য, কপূর, হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্র ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। বাণিজ্যের প্রয়ােজনে চোল রাজারা মণিগ্রাম’ (বড়াে) ও ‘নগরম’ (ছােটো) নামক গিল্ড বা সমবায়গুলি গড়ে তুলেছিলেন।

নগরের উত্থানঃ-


সিন্ধু সভ্যতার যুগে ভারতে প্রথম নগরের উদ্ভব ঘটে (২৩৫০ খ্রিঃ পূঃ— ১৭৫০ খ্রিঃ পূঃ)। হরপ্পা ও মহেনজোদারােতে উন্নত নগরের সূচনা হয়েছিল। প্রধানত বন্দর, বাণিজ্যকেন্দ্র ও বাজারকে কেন্দ্র করে প্রথম নগরের উদ্ভব ঘটে। তাম্রপ্রস্তর যুগের পর লৌহযুগে নগরায়ণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। বৌদ্ধযুগে ভগবান বুদ্ধ তাঁর ধর্মপ্রচার করেছিলেন মূলত নগরকে কেন্দ্র করে। তাঁর সময়ে যেসব শহর জনপ্রিয় হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হল রাজগৃহ, বারাণসী, শ্রাবস্তী, গয়া, পাটলিপুত্র, নালন্দা, কৌশাম্বী, বৈশালী, বেরজ্ঞ, কপিলাবস্তু, চম্পা, অস্মপুর, আপন, কজঙ্গল, অবন্তী (উজ্জয়িনী), কুশীনগর ইত্যাদি। শিল্প, বাণিজ্য, মুদ্রা, কারিগরিশিল্প ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে নগরের উত্থান ঘটে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নগরায়ণ শুরু হয় মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে (৬০০-৩২৫ খ্রিঃ পূঃ)। মৌর্যোত্তর যুগেনগরায়ণ উন্নতির চরম শিখরে ওঠে। 

নগরায়ণের কিছু বৈশিষ্ট হল--


(১) উচ্চ ও উন্নত নগরকার নির্মাণ,

(২) কারুকার্যময় উন্নত মৃৎশিল্প, 

(৩) জনবসতির ঘনত্ব,

(৪) নগরজীবনে বৈচিত্র্য ও বৈসাদৃশ্য।

মন্তব্যঃ-


পতজ্ঞলির মহাভাষ্যে যেসব রাজ্যের উল্লেখ আছে তার মধ্যে অন্যতম ছিল অহিচ্ছত্র,  উজ্জয়িনী, কাঞিপুর, কান্যকুজ, কিষ্কিন্ধা, মধ্যমিকা, মহিষ্মতি, হস্তিনাপুর ইত্যাদি। ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা বলেন, শিল্প-বাণিজ্যের অবনতি নগরের জনবসতির অবলুপ্তির বড়াে কারণ। গুপ্তোত্তর যুগের বহু নগরের দুর্গতির কারণ খারাপ অর্থনীতি।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ