মৌর্যশক্তির পতন (Fall of Mauryan Power),

মৌর্যশক্তির পতন (Fall of Mauryan Power):-

কোনাে সাম্রাজ্যের উত্থান- ইতিহাসের অনিবার্য ললাটলিখন। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে এই নিয়মের মনাে ব্যতিক্রম ঘটেনি। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পিছনে বিভিন্ন কারণ লক্ষ করা যায়। 



() অশােকের মৃত্যুর ৫০ বছরের মধ্যে সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ অশােকের মৃত্যর পর কন্যা চারুমতীর পুত্রদের মধ্যে বিগতাশােক, সম্প্রতি ও অন্যদের মধ্যে শালিশুক ও বহদ্রথ সবাই ছিলেন অযােগ্য। ফলে বিশাল সাম্রাজ্যের চারদিকে অশান্তি শুরু হয়। 


() পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, অশােকের অতিরিক্ত ব্রাহাণবিরােধী নীতি এবং বাহাণদের বিরুদ্ধে দণ্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা’ নীতি গ্রহণ এবং ধর্মমহামাত্র’ নামে কর্মচারী নিয়ােগ সাম্রাজ্যে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। কিন্তু ড. আর. সি. মজুমদার বলেন, “অশােক ব্রাত্মণ কেন, কোনাে সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করেননি। বরং তিনি সাম্যের আদর্শে শাসননীতি গড়ে তুলেছিলেন।”


() মৌর্য শাসন ছিল সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক। ফলে কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দুর্বলতার সুযােগে আমলারা বা উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা দুর্বল রাজার প্রতি আনুগত্য দেখানাে বন্ধ করে।


() সাম্রাজ্যের বিশালতা একসময় পতনের প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। কারণ প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে আঞ্চলিক গােষ্ঠীপ্রধান ও সামন্তপ্রধানরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে।


() অর্থনৈতিক সংকট মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের আর একটি প্রধান কারণ বলে ডি. এন. ঝা ও আর. এস. শর্মা মনে করেন। ড. কোশাম্বী বলেন, “অশােকের পর এই অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে।” 


() কেউ কেউ বলেন, অশােকের শান্তিকামী নীতি তথা ধর্মবিজয় নীতি সেনাবাহিনীকে অলস করে তুলেছিল। ড. রােমিলা থাপার অশােককে মােটেই শান্তিকামী বলতে চাননি। তার মনে হয় আর্থসামাজিক কারণই’ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের মূল কারণ। 


() সবশেষে মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথের সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গের আক্রমণ মৌর্য শাসনের সম্পূর্ণ পরিসমাপ্তি ঘটায়। ১৮৫ খ্রিঃ পূঃ তিনি মৌর্য বংশের শেষ রাজা বৃহদ্রথকে হত্যা করে শুঙ্গ বংশের পত্তন ঘটালে মৌর্য সাম্রাজ্যের চিরপতন ঘটে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ