মৌর্যোত্তরকালে বিভিন্ন রাজ শক্তির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করো। কাম্বদের আধিপত্য, চেদিদের প্রাধান্য বৃদ্ধি, গন্ডােফারনিস, পশ্চিম ভারতে শক সম্প্রদায়, নবম শ্রেণী

মৌর্যোত্তরকালে বিভিন্ন রাজ শক্তির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করো।


মৌর্যোত্তরকালে বিভিন্ন রাজশক্তির প্রতিষ্ঠা (কুষাণ এবং সাতবাহন) [ Establishment of various royal powers in the Post Mauryan period] (Kushana & Satavahana):-


মৌর্যোত্তর যুগের পর শুঙ্গ শাসনের সূচনা করেন পুষ্যমিত্র শুঙ্গ। তিনি ১৮৫-১৪৮ খ্রিঃ পূঃ পর্যন্ত রাজত্বকরেন। তাঁর রাজত্বকালে যবন বা গ্রিকরা হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করে।


পরবর্তী পুষ্যাভূতি শাসকগণঃ- 

পুষ্যমিত্রের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অগ্নিমিত্র সিংহাসনে বসেন। তিনি আগে বিদিশার । (পূর্ব মালব) শাসক ছিলেন। তারপর বসুজ্যেষ্ঠ (সুজ্যেষ্ঠ) রাজা হন। তারপর বসুমিত্র দশবছর রাজত্ব করেন। তাঁর মৃত্যুর পর শুঙ্গদের মধ্যে যাঁরা রাজা। গতি হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন যথাক্রমে অন্ত্রক বা ভদ্রক, পুলিন্দক, ঘােষ, বসুমিত্র, ভাগবত ও দেবভূমি। ব্যাকট্রীয় গ্রিক শাসক অ্যান্টিয়ালকিদাসের দূত হেলিয়ােডােরাস ভাগবতের দরবারে এসেছিলেন। যাই হােক দেবভূমিকে হত্যা করে তাঁর অমাত্য কান্ববংশীয় বসুদেব রাজা হন (৭৫ খ্রিঃ পূঃ)।


কাম্বদের আধিপত্যঃ-

১৮৭ থেকে ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘শুঙ্গকান্থ যুগ’ বলা হয়। উভয় বংশের রাজারা ব্রাত্মণ ছিলেন। পুরাণমতে কাম্ববংশের চারজন পরপর মগধের সিংহাসনে বসেন। যথা --বসুদেব (৯ বছর), ভূমিমিত্র (১৪ বছর), নারায়ণ (১২ বছর) ও সশর্মণ (১০ বছর)। প্রত্যেকের মধ্যে সম্পর্ক ছিল পিতাপুত্রের। পুরাণ থেকে জানা যায় কান্বদের উচ্ছেদ ঘটিয়ে অন্ত্ররাই সাময়িকভাবে মগধের উপর আধিপত্য স্থাপন করে। 

চেদিদের প্রাধান্য বৃদ্ধিঃ-

অগুত্তর নিকায়’ থেকে জানা যায় চেদিরা ভারতের প্রাচীন উপজাতি। চেদি তথা কলিঙ্গ রাজবংশের সেইসময়কার অনেক কথা জানা যায় না। - খারবেলের পিতা ছিলেন মহা-মেঘবাহনবংশীয় রাজা বক্ৰদেব। সেলুকাসের পুত্র দ্বিতীয় অ্যান্টিয়ােকাস-এর শাসনকালে (২৬১-২৪৬ খ্রিঃ পূঃ) ব্যাকট্রিয়ার নেতা ডায়ােডােটাস সিরিয়ার কর্তৃত্ব অস্বীকার করে স্বাধীন ব্যাকট্রিয়ার পত্তন করেন। ডায়ােডােটাসের পুত্র দ্বিতীয় ডায়ােডােটাস ২১২ খ্রিঃ পুঃ সিংহাসনে বসেন বলে পলিবায়াস মনে করেন। 

ব্যাকট্রীয়, রাজাগণঃ-

এইসময় তৃতীয় অ্যান্টিয়ােকাস ব্যাকট্রীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই. চালিয়ে শেষে ব্যাকট্রিয়ার স্বাধীনতা মেনে নেন। দ্বিতীয় ডায়ােডােটাসকে শেষপর্যন্ত হত্যা করে ম্যাগনেসিয়ার অধিবাসী ইউথিডিমস ব্যাকট্রিয়ার সিংহাসনে বসেন। তাঁর পুত্র ডেমিট্রিয়স ভারতে ইন্দো-গ্রিক সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ করেন। তৃতীয় অ্যান্টিয়ােকাস নিজ কন্যাকে ডেমিট্রিয়স-এর সঙ্গে বিবাহ দেন (২০৬ খ্রিঃ পূঃ)। তবে ১৯০ খ্রিঃ পূঃ ইউথিডিমস-এর মৃত্যুর পর ডেমিট্রিয়স রাজা হন ৩৫ বছর বয়সে।


পশ্চিম ভারতে শক সম্প্রদায়ঃ-

প্রায় দুশাে বছর ইন্দো-গ্রিকদের রাজত্বের পর শকদের আক্রমণ শুরু হয়। শকরা মধ্য এশিয়ার সিরদরিয়া ও আমুদরিয়া অঞ্চলের এক যাযাবর জাতি। মার্শালের মতে, শকদের প্রথম রাজা মােয়েস বা মােগ পুষ্কলাবতী ও তক্ষশিলা জয় শক করে ‘রাজাধিরাজ’ উপাধি নেন। তাঁর পুত্র অজেস্‌ পাঞ্জাব, মথুরা, উজ্জয়িনী, মালব ও সৌরাষ্ট্র (ভূগুচ্ছ) প্রভৃতি স্থানে আধিপত্য স্থাপন করেন। অজেসের পর অজিলিস, দ্বিতীয় অজেস প্রমুখ ‘ক্ষত্রপ’ ও ‘মহাক্ষত্রপ’ উপাধি ধারণ করতেন। 

গন্ডােফারনিসঃ-

পহলবদের প্রথম রাজা মিথরিডেটিস ব্যাকট্রিয়া থেকে তক্ষশিলা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। পহ্নবদের অন্যান্য রাজাদের মধ্যে ভানােনেস, অর্থাঙ্গেস, লিরিসেস ও গন্ডােফারনিস পরপর রাজা হন বটে, কিন্তু এঁদের মধ্যে সর্বশক্তিমান ছিলেন গন্ডােফারনিস। শােনা যায়, গন্ডােফারনিসের রাজত্বকালে যিশুখ্রিস্টের শিষ্য সেন্ট টমাস ভারতে প্রথম খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারে আসেন। গন্ডােফারনিস সপরিবারে এই সেন্ট টমাসের কাছে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। গন্ডােফারনিসের মৃত্যুর পর কুষাণরা তার অধিকৃত স্থানের অধীশ্বর হয়ে ওঠেন। গন্ডােফারনিসের প্রচুর মদ্রা থেকে পহুবদের সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যায়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ