মৌর্য শাসনব্যবস্থা :-
মৌর্য শাসনব্যবস্থা বলতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থাকে বােঝানাে হয়। চন্দ্রগুপ্তের প্রদেশ সংখ্যা কত ছিল তা সঠিকভাবে জানা। গেলেও, মােটামুটি অনুমান করা গেছে।
বিকেন্দ্রিকরণ নীতি:-
তিনি সমগ্র সাম্রাজ্যকে মােট চারটি প্রদেশে ভাগ করেছিলেন। এগুলি হল—উত্তরাপথ (রাজধানী তক্ষশিলা), অবন্তীব (উজ্জয়িনী হল এর রাজধানী), দক্ষিণাপথ (রাজধানী। সুবৰ্ণগিরি) ও প্রাচ্য (রাজধানী পাটলিপুত্র)। সম্রাট আশােক অবশ্য আর একটি নতুন প্রদেশ গঠন করেছিলেন, এর নাম কলিঙ্গ (রাজধানী তোষালী)।
পাটলিপুত্র নগরের শাসনব্যবস্থাঃ-
মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্র নগরীর পৌর শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন ৯ মাইল দীর্ঘ ও ১ মাইল প্রস্থ এই বিশাল নগরীর পৌর শাসন চালাতে ৩০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘পৌরবাের্ড’ গঠিত হয়। প্রতি পাঁচজন করে সদস্য নিয়ে মােট ‘ছয়টি বিভাগ’ এর প্রতিটি পৃথক দায়িত্ব পালন করত। এই ছটি বিভাগ হল--
(ক) শিল্প পরিচালন,
(খ) বিদেশিদের আপ্যায়ন,
(গ) ব্যাবসাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ,
(ঘ) জন্মমৃত্যুর হিসাব সংরক্ষণ,
(ঙ) শিল্পজাত পণ্য বিক্রির তত্ত্বাবধান এবং
(চ) বিক্রিত দ্রব্যের উপর ১ ভাগ শুল্ক আদায়করণ। ঐতিহাসিকরা এই ধরনের পৌর শাসনকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন।*
আঞ্চলিক শাসন ও বিচারব্যবস্থাঃ-
সুশাসনের জন্য সাম্রাজ্যকে প্রদেশ বা দেশ, জেলা বা অহর বা বিষয় এবং গ্রামে ভাগ করা হয়। প্রদেশের শাসককে আর্যপুত্র’, জেলার শাসকদের ‘সন্নিধাত্রী’ ও ‘সমাহত্ৰী’ এবং গ্রামের শাসককে ‘গ্রামিক’ ও ‘গােপ’ বলা হত। বিচারব্যবস্থা ছিল নিরপেক্ষ। ধর্মান্থীয়’ (দেওয়ানি) ও কণ্টকশােধন’ (ফৌজদারি) আদালত ছাড়াও সংগ্রহণ’, ‘স্থানিক’ ও ‘দ্রোণমুখ’ নামে নিম্ন আদালত ছিল। বিচারে বেত্রাঘাত, অঙ্গচ্ছেদ, মৃত্যুদণ্ড প্রভৃতি শাস্তি হত।
সামরিক বিভাগঃ-
মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা’ থেকে জানা গেছে, বিশাল সাম্রাজ্যের সুরক্ষার জন্য চন্দ্রগুপ্ত এক উন্নত সামরিক
ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। সামরিক বিভাগের ছয়টি ভাগ হল-
(১) পদাতিক,
(২) অশ্বারোহী,
(৩) রথারোহী,
(৪) রণহস্তীবাহিনী,
(৫) রণতরি বাহিনী,
(৬) রসদপত্র সরবরাহকারী বাহিনী।
প্লিনির বর্ণনা থেকে জানা যায়, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সেনাবাহিনীতে ৬,০০,০০০ পদাতিক, ৩০,০০০ অশ্বারোহী, ৯০০০ হাতি, ৮,০০০ রথ ও কিছু রণতরি ছিল। ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরির মতে, জলদস্যু দমনে রণতরিগুলির প্রয়ােজন ছিল।
মেগাস্থিনিসের মতে ভূমিরাজস্ব ছিল জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস। উৎপন্ন ফসলের ৬ ভাগের ১ ভাগ রাজস্ব হিসাবে গৃহীত হত। তবে কৌটিল্যের মতে রাজস্বের হার ছিল ৪ ভাগের ১ ভাগ। ১০ ভাগের ১ ভাগ শুল্ক ব্যাবসা-বাণিজ্য থেকে গ্রহণ করা হত। ভূমিরাজস্ব নগদে বা শস্যের মাধ্যমে দেওয়া যেত। এই করকে বলা হত ‘ভাগ। অন্যান্য করের মধ্যে পথকর, জলকর, ফেরিকর, চারণকর, বিবাহকর, গৃহকর, জন্মমৃত্যুকর, ভিস্তি (শ্রমকর), পিন্ডকর’ (গ্রামের উপর) ইত্যাদি। চন্দ্রগুপ্ত প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী শাসন প্রবর্তন করেছিলেন। ঐতিহাসিক রােমিলা থাপারের মতে, তিনি প্রথম সরকারি আমলাতন্ত্রের পত্তন করেছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ