সাতবাহন রাজ শক্তির বা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করো। সিমুক, কৃষা ও সাতকর্ণী,গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী, সাতবাহনশাসনের গুরুত্ব, নবম শ্রেণী

সাতবাহন  রাজ শক্তির বা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করো।

সাতবাহন রাজশক্তি (Satabahana Royal Power) :- 


উৎপত্তিঃ-

মৌর্যদের দুর্বলতার সুযােগে শুঙ্গ, কাম্ব ও সাতবাহন রাজাদের উৎপত্তি ঘটে। পুরাণে সাতবাহনদে ‘অন্ত্রবংশ’-জাত ‘অন্ধ্রভৃত্য’ বলা হয়। গােদাবরী ও কৃত্মা নদীর মধ্যবর্তী স্থান অন্ত্রদের আদি বাসস্থান। কথিত আছে এক বিধবা ব্রাত্মণী ও নাগবংশীয় পুরুষের মিলনে সাতবাহন বংশের উৎপত্তি ঘটে। মােটামুটি জানা যায় সাতবাহনরা ৩০০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। সাতবাহনদের রাজধানী পৈঠান বা প্রতিষ্ঠানে এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সিমুক।



সিমুক, কৃষা ও সাতকর্ণীঃ-

ড. গােপালাচারীয়া ও ড. স্মিথ পুরাণের মত গ্রহণ করে বলেন, কান্থ ও শুঙ্গ। বংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে সিমুক সাতবাহন সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন (২৩৫ খ্রিঃ পুঃ – ২১ খ্রিঃ পূঃ)। সিমুকের ভাই ছিলেন কৃষ্ণ। তিনি নাসিক পর্যন্ত রাজ্যবিস্তার করেন কৃষ্ণের পুত্র প্রথম সাতকর্ণীর রানি নয়নিকার ‘নানঘাট শিলালিপি’ থেকে জানা যায় বিদর্ভ, নর্মদা উপত্যকা ও পশ্চিম মালব তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত হয় (নাবালক পুত্রের বকলমে রাজত্ব করেন)।

গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী :-

প্রথম সাতকর্ণীর মৃত্যুর একশত বছর পর গৌতমীপুত্র সাতকর্ণ (১০৬-১৩০ খ্রিঃ) রাজা হন। তাঁর মা বালাশ্রী সাতকর্ণীর ‘নাসিক প্রশস্তি’ থেকে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়। তিনি বিন্ধ্যপর্বত থেকে ত্রিবাঙ্কুর ও পর্বঘাট পর্বত থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতের এক বিশাল এলাকা জয় করেছিলেন। মালব এবং কাথিয়াবাড়ের ক্ষহরত’ শকদের তিনি ধ্বংস করেছিলেন। পহলব ও কষাণদের বিরুদ্ধে তিনি দীর্ঘকাল সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন। নাসিক প্রশস্তিতে তাকে ‘শক-যবন- পলব-নিসূদন’ এবং সাতবাহনকুল-যশঃ-প্রতিষ্ঠানকর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। গৌতমীপুত্র শকরাজ তেপানকে পরাস্ত করে (১২৫ খ্রিঃ) সৌরাষ্ট্র, গুজরাট, কোঙ্কন, বেরার, মালব প্রভৃতি ভয় করলেও শকক্ষপ রুদ্রদামনের কাছে তার পরাজয় ঘটে। কিন্তু এই পরাজয়ের কলঙ্ক ঢাকতে তিনি নিজপুত্র বশিষ্ঠপুত্র সাতকর্ণীকে রুদ্রদামনের কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন।

ধর্মীয় উদারতা:-

গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী ক্ষত্রিয়দের দর্পচূর্ণ করে নিম্নবর্ণের মানুষকে সামাজিক মর্যাদায়প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি শুধু যােদ্ধা নন, সুশাসক ও শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন। তিনি ব্রাহ্রণ হলেও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কার্লে ও নাসিকে অনেক গুহা ও ভূমিদান করেছিলেন।

উত্তরাধিকার:-

১৩০ খ্রিঃ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর মৃত্যুর পর বশিষ্ঠিপুত্র পুলমায়ী (১৩০-১৫৮। খ্রিঃ), যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী (১৬৫-১৯৪ খ্রিঃ) রাজা হন। কিন্তু তারপর কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযােগে আভীররা মহারাষ্ট্রে স্বাধীন রাজ্য গড়ে তােলে, ইক্ষাকুরা অন্ত্র দখল করে এবং পল্লব ও ব্যাকট্রিক শক্তি সাতবাহন সাম্রাজ্যের উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালাতে থাকে ফলে ২২০ খ্রিঃ সাতবাহন-শক্তি নির্মূল হয়। 

সাতবাহনশাসনের গুরুত্বঃ-

দীর্ঘ ৩০০ বছর রাজত্বের ফলে সাতবাহনরা নানাভাবে ভারতের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করেছিলেন। আর্য ও দ্রাবিড় সভ্যতার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সাতবাহন বিদেশি আক্রমণ থেকে ভারতীয় সংস্কৃতিকে কিছুটা আলাদা রাখতে পেরেছিলেন। ঐতিহাসিক কে. এম. পানিক্করের ভাষায় “তিনশাে বছর রাজত্ব করে সাতবাহনরা ভারতের সাংস্কৃতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছিলেন।”




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ