প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য ও চিত্র শিল্পের উন্নতির ধারা বিবৃত করো।
চিত্রকলাঃ-
মৌর্যযুগে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গিয়েছিল চিত্রশিল্পে। রাজধানী পাটলিপুত্রের দেয়ালগাত্রে কাঠের উপর রং করা পালিশের কাজ রীতিমতাে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। রাজা খারবেলের তৈরি ওড়িশায় উদয়গিরির, জৈনগুহামন্দির অন্যতম। পুনার কার্লের চৈত্যটি সর্ববৃহৎ গুহামন্দির (১০০-১২৫ খ্রিঃ)। কালিদাসের‘মালবিকাগ্নিমিত্রম’ নাটকে চিত্রশালার কথা আছে। গুপ্তযুগে অজন্তার চিত্রগুলি ভগবান বুদ্ধ, বােধিসত্ত্ব ও জাতকের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া রাজা, রাজকন্যা, রাজপ্রাসাদ, ভিক্ষুক, সন্ন্যাসী, ফুল, ফল, পশু, পাখি ইত্যাদি চিত্র রয়েছে। কালাে, সাদা, লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রং সজন্তর চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল।অজন্তার মােট ৩০টি গুহার মধ্যে ১নং, ২নং, ১৬নং, ১৭নং ও ১৯নং গুহাগলি চিত্রশিল্পে সমৃদ্ধ। ১নংগুহাচিত্রটিতে বােধিসত্ত্ব অবলােকিতে পদ্মপাণির মূর্তিটি আজ বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। হিউয়েন সাঙ অজন্তার চিত্রশিল্পের উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন। এইসব চিত্রে পার্থিব ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রভাব রয়েছে। অজন্তা থেকে ১০০ মাইল দুরে মধ্যপ্রদেশের বাঘ-এর ৩নং ও ৪নং গুহাচিত্রগুলিতে একই প্রভাব রয়েছে।
চিত্রশিল্প : গুপ্তযুগঃ-
ফরাসি পণ্ডিত ফার্গসন মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদে অবস্থিত অজন্তা ও ইলােরায় প্রায়। ৩৯টি গুহাচিত্রআবিষ্কার করেছিলেন। এর অধিকাংশ গুপ্তযুগের তৈরি। রং-এ, রেখায় ও শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় গুপ্তযুগেরচিত্রশিল্প (Painting) ইউরােপের রেনেসাঁ যুগের শিল্পী। মাইকেল এঞ্জেলাে, রাফায়েলের চিত্রশিল্পকে হার মানায়।এখানকার গুহাস্থাপত্যগুলি জৈন, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত অজন্তার ৮০ মি. উঁচু ও ৩৮০ - মি. লম্বাপ্রস্তরফলকে ২৪টি বৌদ্ধবিহার ও ৫টি হিন্দু মন্দির রয়েছে। অজন্তায় ১৯টি চৈত্য, দেয়াল ও সিলিং-এর নকশায় জাতকের কাহিনি তৈরি ইলােরার ১২টি পাথর-কাটা বিহারের মধ্যে মহাওয়াদা ও বিশ্বকর্মা বিহারদুটিগুরুত্বপূর্ণ। নয়নাভিরাম গুহাচিত্রগুলির মধ্যে ‘মাতা ও পুত্র’, ‘বােধিসত্ত্ব চক্রপাণি’, ‘হরিণ চতুষ্টয়’, অসংখ্য প্রাণবন্ত নারীমূর্তি ইত্যাদি বাস্তব জীবনের স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি শিল্পীরা তুলে ধরেছেন বলে ড. ডি. এন. ঝা বলেন বহু মানুষ ও জীবজন্তুর চিত্র এখানে আছে।
পালযুগঃ-
রামপালের সময়ে রচিত ‘অষ্ট সহফ্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা’ নামক এক পুথিতে বহু ছবিম দেখে চিত্রশিল্পের দক্ষতার কথা জানা যায় (পালযুগে বজ্রযান ও তন্ত্রযান ধর্মের বিষয়কে কেন্দ্রকরে চিত্রগুলি আঁকা হয়। চিত্রের চারিদিকে কালাে বা লাল রং-এর সরু রেখা টানা হত। ড. এস. কে. সরস্বতী পাল চিত্রকলার ওপর প্রচুর গবেষণা করেছেন। কেম্ব্রিজ সংগ্রহশালা’, রয়্যাল এশিয়াটিক সােসাইটি অফ বেঙ্গল’ও ‘অক্সফোর্ডের বােভেলিয়ান গ্রন্থাগারে’ পালযুগের চিত্রকলার বহু তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
0 মন্তব্যসমূহ