প্রাচীন বিজ্ঞান চর্চার ও চিকিৎসাশাস্ত্র পরিচয় দাও। অথবা, গুপ্তযুগে বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্র অগ্রগতি আলোচনা করো। নবম শ্রেণী
বিজ্ঞান :-
ভারতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রকৃতপক্ষে শুরু হয় মৌর্য যুগে। তবে কুষাণ আগে বিজ্ঞানের চরম অগ্রগতি ঘটে। কনিষ্ক নিজেই বিজ্ঞানের অনুরাগী ছিলেন। তাঁর রাজসভায় ছিলেন বিখ্যাত আয়ুর্বেদাচার্য চরক ও সুশ্রুত। চরকের লেখা ‘চরক সংহিতা’ ও সুশ্রতের ‘সুশ্রত সংহিতা’ চিকিৎসাশাস্ত্রে দুটি অমূল্য গ্রন্থ (বিখ্যাত পণ্ডিত ও গণিতজ্ঞ নাগার্জুনের লেখা ‘মধ্যমিক কারিকা’ ও ‘মহাপ্রজ্ঞাপারমিতা শাস্ত্র’ দুটি অমূল্য রচনা) মধ্যমিকাসুত্রকে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্বের সঙ্গে তুলনা করা হয়। হিউয়েন সাঙ তাঁকে বিশ্বের চার আলাের অন্যতম” বলেছেন। নাগার্জুন মাধ্যমিক দর্শন’ বা শুন্যবাদের প্রবর্তক ছিলেন। বিজ্ঞানের সব ধারা যেমন গণিত, জ্যোতিষ, চিকিৎসা, রসায়ন, ধাতুবিদ্যা প্রভৃতি। ক্ষেত্রে ভারতীয় মনীষার অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট (৪৭৬-৫৫০ খ্রিঃ) পাটলিপুত্রের কুসুমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সূর্য-সিদ্ধান্ত’ থেকে জানা যায়, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘােরে, ৩৬৫দিনে এক বছর হয়, চন্দ্রগ্রহণ, সর্যগ্রহণ, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি ইত্যাদির ব্যাখ্যা।
বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ বরাহমিহিরের (৫০৫-৫৮৭ খ্রিঃ) ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ এবং বৃহৎসংহিতা ; গণিতবিদ শ্রীধরের ‘গণিতসার’ বা ‘ত্রিশতিকা’ (১০২০ খ্রিঃ), ভাস্করের ‘সিদ্ধান্ত শিরােমণি’ মঞ্জালের ‘লঘু মানস’ অন্যতম। ব্ৰহ্বগুপ্তের (৫৯৮-৬৬০ খ্রিঃ) ‘ব্ৰত্মসিদ্ধান্ত’-এ নিউটনের অনেক আগে অভিকর্ষ বলের কথা বলা হয়েছিল। ১ থেকে ৯’-এর ব্যবহার এবং পিথাগােরাসের থিয়ােরেম, ত্রিকোণমিতির ‘কোসাইন’, ‘সাইন’ প্রভৃতি ছটি চিহ্ন ভারতীয়দের সষ্টি এবং তা এই গুপ্তযুগেই। ধাতুবিদ্যার উন্নতির পরিচয় বহন করে দিল্লির কাছে মেহরৌলির মরিচাবিহীন লৌহস্তম্ভ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধন্বন্তরী, বাগভট্ 'অষ্টাঙ্গ সংগ্রহ গ্রন্থ) এবং কারও মতে শল্যচিকিৎসক সুশ্রুত এ যুগের মানুষ ছিলেন। গিরিন্দ্রনাথ মুখার্জির ‘দ্য সার্জিক্যাল ইনস্ট্রমেন্ট অব দি হিন্দুস’ গ্রন্থ থেকে শল্যচিকিৎসার বহু তথ্য জানা যায়। ঐতিহাসিক ড. দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ ঝা গুপ্তযুগ, বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যার উন্নতির প্রশংসা করেছেন।*
চিকিৎসাশাস্ত্রঃ-
চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থগুলির মধ্যে মাধবকারের ‘মাধবনিদান’, বৃন্দের ‘সিদ্ধযােগ’, চক্রপাণি দত্তের‘ 'আয়ুর্বেদীপিকা’, ‘ভানুমতী’, 'শব্দচন্দ্রিকা’, ‘চিকিৎসাসংগ্রহ, শূরপাল ও বঙ্গসেনের 'শারীরবিদ্যা’ ও ‘চিকিৎসাশাস্ত্রগ্রন্থ’ এবং সুরেশ্বরের ‘শব্দপ্রদীপ',’বৃক্ষায়ুর্বেদ’ ও ‘লৌহপদ্ধতি’ চিকিৎসাশাস্ত্রের অমূল্য রচনা। বাগভট্ট, ভাস্করাচার্য (জন্ম ১১১৪ খ্রিঃ), কল্যাণ বর্মন, দ্বিতীয় আর্যভট্ট ও আর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থ থেকে বহু তথ্য জানা যায়। এ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে ড. চন্দ্রনাথ শীলের ‘পজিটিভ সাইন্স অব দি এনসিয়েন্ট হিন্দুস’ ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘হিস্টি অব হিন্দ কেমিস্ট্রি’ গ্রন্থ বিশেষ সাহায্য করে। মহাবীর, বলভদ্র, ভট্টোপালের ‘গণিত সন্ধ’ প্রমুখ গণিত ও জ্যোতিষের উপর বহু গ্রন্থ লিখে জ্ঞানপিপাসুদের কাছে খ্যাতি পেয়েছেন।
0 মন্তব্যসমূহ