মিরজাফর :-
সিরাজ-উদ-দৌল্লার পতনের পর ব্যক্তিত্বহীন কাপুরুষ নবাব মিরজাফর বাংলার মসনদে বসলেও তার সার্বভৌমত্ব বলে কিছুই ছিল না। তিনি ইংরেজদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর কাজ ছিল নবাব হিসাবে ইংরেজদের সীমাহীন চাহিদা নিবৃত্তি করা। দিনে দিনে মিরজাফরের উপর আর্থিক দাবিদাওয়ার মাত্রা বাড়তে থাকলে একসময় তিনি অসহ্য হয়ে ওলন্দাজ বণিকদের সঙ্গে গােপনে সম্পর্ক গড়ে তােলেন। অবশেষে জানতে পেরে ইংরেজ সেনাপতি ক্লাইভ বিদেরার যুদ্ধে (২৫.১০.১৭৫৯)। মিরজাফরকে পরাস্ত করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের পরিবর্তে এখন তার জামাতা মিরকাশিমকে বাংলার মসনদে বসানাে হল।
মিরকাশিমঃ-
মিরকাশিম ১৭৬০ খ্রিঃ বাংলার নবাবি পদে আসীন হলেন। তিনি প্রথম দিকে ইংরেজদের অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া যথাসম্ভব পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে মিরকাশিমের রাজত্বের প্রথম দিকে ইংরেজদের সঙ্গে তার ভালাে সম্পর্ক ছিল। ক্লাইভের পরবর্তী গভর্নর ভ্যানসিটার্ট তখন নবাবের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
(১) রাজস্ববিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের অবৈধ উপায়ে অর্থ আত্মসাৎ বন্ধ করতে মিরকাশিম চুনিলাল, মণিলাল ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের উৎখাত করেন।
(২) কোম্পানির সঙ্গে রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে বােঝাপড়া করতে মিরকাশিম বার্ষিক ২৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামের জমিদারি স্বত্ব এক গােপন চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানিকে ছেড়ে দেন।
(৩) সামরিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য মিরকাশিম প্রচুর কামান, বন্দুক ইত্যাদি সংগ্রহ করেন। বিখ্যাত ফরাসি সেনাধ্যক্ষ মার্কার ও সমরকে তিনি তার সামরিক বিভাগে নিয়ােগ করেন। ড. নন্দলাল চ্যাটার্জি তাঁর ‘মিরকাশিম’গ্রন্থে বলেছেন, নবাব কোম্পানির সবরকম নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
১৭৬৩ খ্রিঃ নবাব মিরকাশিম ইংরেজ কুঠিয়াল এলিস সাহেবের বিরুদ্ধে কাটোয়া, গিরিয়া, উদয়নালা, মঙ্গের, মুরশিদাবাদ ও সুটির যুদ্ধে পর-পর পরাজিত হয়ে শেষে নবাব পাটনায় আশ্রয় নেন। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবার চেয়ে মসনদের মর্যাদাটুক তখনও তাঁর কাছে অনেক বড়াে প্রাপ্তি ছিল।
বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪ খ্রিঃ):-
পরাজিত মিরকাশিম এবার অযযাধ্যায় নবাব ওয়াজির সুজা-উদ-দ্দৌলা ও মােগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে বক্সারের প্রান্তরে ক্লাইভের সুদক্ষ সেনাপতি মেজর হেক্টর মনরাের মুখােমখি হন। মিরকাশিমের ফরাসি সেনাপতি মার্কার ও সমরুর সঙ্গে ইংরেজ বাহিনীর ২২ অক্টোবর ১৭৬৪ খ্রিঃ বক্সারের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পরাজিত মিরকাশিম পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। পরে ১৭৭৭ খ্রিঃ দিল্লির সন্নিকটে এক আততায়ীর হাতে তাঁর মৃত্যু হয়। আর তাঁর দুই মিত্রপক্ষ শাহ আলম ও সুজা-উদ-দৌল্লা শেষপর্যন্ত ইংরেজদের নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
0 মন্তব্যসমূহ