ইংরেজদের ভারতে বাণিজ্যবিস্তারের পরিচয় দাও। ভারতে ইউরােপীয়দের আগমন সম্পর্কে আলােচনা করাে। ডাচ্‌ বা ওলন্দাজ, পাের্তুগিজ, নবম শ্রেণী

ইংরেজদের ভারতে বাণিজ্যবিস্তারের পরিচয় দাও।

আথবা, ভারতে ইউরােপীয়দের আগমন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ইউরােপীয় বণিকদের সঙ্গে সম্পর্ক : ভারতে ইউরােপীয় বাণিজ্যের প্রসার (Relation with the European merchants: Spread of European commerce in India):-


পাের্তুগিজ:-

ডেনমার্ক থেকে ডেনিশ বণিকরাও এদেশে এসেছিলেন। ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে পাের্তুগিজ নাবিক বার্থোলােমিউদিয়াজ আফ্রিকার দক্ষিণে ‘উত্তমাশা অন্তরীপ’ (Cape of Good Hope) প্রদক্ষিণ করে ভারতে আসার জলপথের সন্ধান দিলে দশ বছর পরে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে পাের্তুগিজ নাবিক ভাস্কো। ডা-গামা ভারতের পশ্চিমে কালিকটে আসেন। ভারত মহাসাগর | ও আরব সাগরে পাের্তুগিজদের একাধিপত্য গড়ে ওঠে। কালিকট, কোচিন, কান্নানাের, গােয়া, দমন, দিউ, সলসেট, বেসিন, বােম্বে, সিংহল, চৌহল ও হুগলিতে পাের্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি গড়ে ওঠে। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে পােপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডার পাের্তুগালের রাজাকে ভারত, পারস্য, ইথিয়ােপিয়াসহ সমস্ত সমুদ্রপথের অধিপতি ভাস্কো-ডা-গামা উপাধি দেন। ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্‌সিস্‌কো আলমিডা নামে এক পাের্তুগিজ ভারত উপনিবেশগুলির শাসক নিযুক্ত হন। ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে আলবকার্ক। ভারতের শাসক হয়ে আসেন। ভারতে তাঁর সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির জন্য ‘নীল জল নীতি’ (Blue water policy') সক্রিয় ছিল। জে. জে. এ. ক্যাম্পজ (Campose) তাঁর হিস্ট্রি। অব দি পাের্তুগিজ ইন বেঙ্গল’ ও মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল' গ্রন্থে পাের্তুগিজদের উৎপাতের কথা উল্লেখ আছে। ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে সলসেট ও বেসিন মারাঠাদের দখলে গেলে পাের্তুগিজদের পতন শুরু হয়। তবে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে গােয়া, দমন ও দিউ স্বাধীন হলে চারশাে বছরের পাের্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে।

ডাচ্‌ বা ওলন্দাজঃ-

হল্যান্ডের অন্তর্গত নেদারল্যান্ডের বণিকদের ওলন্দাজ বা ডাচ্‌ বলা হয়। তারা ইউনাইটেড ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০২ খ্রিঃ) নামে একটি বাণিজ্য সংস্থা গঠন করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মশলাদ্বীপের দিকে যাত্রা করলে পাের্তুগিজরা বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত পাের্তুগিজদের | কাছ থেকে ডাচ্ বণিকরা অ্যামবয়না (১৬০৫ খ্রিঃ), মালাক্কা (১৬৪১ খ্রিঃ), গােয়া (১৬৩৯ খ্রিঃ) ও সিংহল (১৬৫৮ খ্রিঃ) দখল করে। ভারতের গুজরাট, করমণ্ডল উপকূল, বাংলা, বিহার ও ওড়িশাতে তারা বাণিজ্যকঠি গঠন করে। তবে সুরাট (১৬১৬ খ্রিঃ), চুচুড়া (১৬৫৩ খ্রিঃ), পাটনা, কাশিমবাজার, নেগাপট্টম (১৬৫৯ খ্রিঃ) এবং কোচিন (১৬৬৩ খ্রিঃ) ছিল ওলন্দাজদের উল্লেখযােগ্য বাণিজ্যকেন্দ্র।


      ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি সুরাটে প্রথম বাণিজ্যকুঠি গড়ে তােলে। রাজা প্রথম। জেমসের দুত স্যার টমাস রাে ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মােগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের দরবারে। আসেন এবং ভারতে বাণিজ্যের কিছু সুযােগ লাভ করেন। ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে মধ্য সুরাট, | আমেদাবাদ, আগ্রা ও ব্রোচ দখল করে। ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে কোলানির ফ্রান্সিস ডে (Francis Day) প্রধান চন্দ্রগিরি রাজার কাছ থেকে মাদ্রাজ্যের ইজারা লাভ করে সেখানে ফোট সেন্ট জর্জ দুর্গটি নির্মাণ করেন। ফলে মুসলিপত্তমের পরিবর্তে মাদ্রাজ কোম্পানির সদর। কার্যালয়ে পরিণত হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের ওড়িশার বালাশাের ও হরিহরপুর (১৬৩৩ খ্রিঃ), কাশিমবাজার ও পাটনা (১৬৫১ খ্রিঃ), বাংলা, বিহার, ওড়িশা ও করমণ্ডল উপকূলে (১৬৫৮ খ্রিঃ) ব্রিটিশ বাণিজ্যকুঠি গড়ে ওঠে। 

ইংরেজঃ-

১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে অলিভার ক্রমওয়েল কোম্পানিকে নানাপ্রকার বাণিজ্যিক সুযােগ-সুবিধা দেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অনুমােদন | সাপেক্ষে (১৬৬৯ খ্রিঃ) বােম্বে কুঠির গভর্নর জর্জ ওক্সেনডেন ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে মােগলদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের ক্ষমতা লাভ করেন। ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শাসক শায়েস্তা খাঁ ইংরেজদের বাংলা কুঠির প্রধান জব চার্নককে। কলকাতার ২০ মাইল দক্ষিণে উলুবেড়িয়াতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের অনুমতি দেন। কিন্তু। ক্যাপ্টেন হিদ জোর করে চট্টগ্রাম দখলের ব্যর্থ চেষ্টা করলে ঔরঙ্গজেব ১:৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ নেন। ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে বার্ষিক ১২০০ টাকার বিনিময়ে জব চার্নক সুতানুটি, গােবিন্দপুর ও কলকাতার জমিদারি ক্রয় করেন। তিনি কলকাতা মহানগরীর প্রতিষ্ঠাতা। (১৬৯০ খ্রিঃ) ছিলেন। ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়মের নামানুসারে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গটি নির্মাণ শুরু এবং ১৭১৫ খ্রিঃ নির্মাণকার্য শেষ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এইভাবে ভারতে প্রভুত্ব কায়েম করে।* 

ফরাসিঃ-

ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই-এর অর্থসচিব কোলবার্টের উদ্যোগে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফরাসি সরকারের নির্দেশে এই কোম্পানির প্রধান ফ্রাঁসােয়া ক্যারন সুরাটে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেন (১৬৬৭ খ্রিঃ)। ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে। মুসলিপত্তমে দ্বিতীয় ফরাসি বাণিজ্যকুঠিটি গঠিত হয়। ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে ফরাসিরা মাদ্রাজের কাছে সেন্ট থােম দখল করে। কিছুদিনের মধ্যে গােলকুণ্ডর সুলতান ও পাের্তুগিজদের। বিরােধিতার ফলে ফরাসিরা ওই স্থান ত্যাগ করে। পরে ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঁসােয়া মার্টিন নামে ফরাসি বলিকুণ্ডপুরমের নবাবের কাছ থেকে একটি গ্রামের ইজারা নিয়ে পন্ডিচেরিতে ফরাসি উপনিবেশ গড়ে তােলেন। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খাঁও তাদেরকে চন্দননগরে বাণিজ্যকুঠি নির্মাণের অনুমতি দেন। ১৭০০ থেকে ১৭২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাসি কোম্পানি নানা বিপদের মধ্য দিয়ে চালিত হয়েছিল। পরে আবার শক্তি সঞ্চয় করে ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে মরিশাস দ্বীপ, মাহে বন্দর (১৭২৫ খ্রিঃ) ও কারিকুল (১৭৩৯ খ্রিঃ) দখল করে কঠি গঠন করে। ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দের পর। ডুপ্লের ভারতে রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণই ফরাসি কোম্পানির পতন ডেকে আনে। ভারতে ইউরােপীয়দের আগমন ঘটে মােগল আমলে (১৫২৬-১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে)। ইউরােপীয়রা এদেশে পর্যটক, বণিক, রাজদূত, খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক হিসাবে এসেছিলেন।


   ক্রমশ ফ্লান্ডার্সের ‘অস্টেন্ড (Ostend) কোম্পানি’ (১৭২৩ খ্রিঃ), সুইডিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ (১৭৩১ খ্রিঃ) ও ‘অস্ট্রিয়ান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ (১৭৫৫ খ্রিঃ) ভারতে বাণিজ্য করতে আসে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ