প্রাণী রেচনে চর্ম, ফুসফুস ও যকৃতের ভূমিকা (Role of Skin, Lungs and Liver in Animal Excretion)
বৃক্ক ছাড়া মানবদেহের অন্যান্য সাহায্যকারী রেচন অঙ্গগুলি হল—চর্ম, ফুসফুস এবং যকৃৎ।
(1) রেচনেচর্মের ভূমিকাঃ-
চর্ম আমাদের নরম পেশিকে আচ্ছাদন করে রাখে, ফলে এর প্রধান কাজ রক্ষণাত্মক (protective)। তা ছাড়া চর্ম স্পর্শেন্দ্রিয়রূপেও কাজ করে। চর্মের আর একটি কাজ হল রেচনে সহায়তা করা । চর্মে অবস্থিত ঘর্মগ্রন্থি বা স্বেদগ্রন্থি থেকে যে ঘাম নিঃসৃত হয়, তার সাহায্যে দেহের অতিরিক্ত জল, খনিজ লবণ এবং কিছু পরিমাণ অ্যামােনিয়া ও ইউরিয়া নির্গত হয়। চর্মের মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ CO2 গ্যাস ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দেহের বাইরে নির্গত হয়। এ ছাড়া চর্মে অবস্থিত সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত সিবাম-এর মাধ্যমে অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল, ফ্যাটি অ্যাসিড, হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি রেচিত হয়। পতঙ্গ, সাপ প্রভৃতি প্রাণীদের খােলস ত্যাগের সময় ত্বকে সঞ্চিত রেচন পদার্থগুলি তাদের দেহ থেকে দূরীভূত হয়।
(2) রেচনেফুসফুসের ভূমিকাঃ-
ফুসফুস মুখ্যত স্বাসযন্ত্র। কিন্তু ফুসফুস গ্লুকোজ দহনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প দেহের বাইরে নিষ্কাশিত করে রেচনে। সহায়তা করে।
(3) রেচনেযকৃতেরভূমিকাঃ-
যকৃৎ আমাদের দেহের সবচেয়ে বড়াে পৌষ্টিক গ্রন্থি। যকৃতের মধ্যে হিমােগ্লোবিন বিশ্লিষ্ট হয়ে বিলিরুবিন, বিলিভারডিন, লেসিথিন প্রভৃতি রেচন পদার্থ সষ্টি না করে। এইসব রেচন পদার্থ পিত্তরসের মাধ্যমে অন্ত্রে আসে এবং মলের সাহায্যে দেহ থেকে নির্গত হয়। যকৃতে অরনিথিন চক্রের মাধ্যমে অ্যামােনিয়া থেকে ইউরিয়া সংশ্লেষিত হয়। ইউরিয়া মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়।
মূত্রের কয়েকটি অস্বাভাবিক উপাদান সংক্রান্ত রােগঃ-
উপাদান
1.গ্লুকোজ
2. বিলিরুবিন
3. কিটোন বডি
4. অ্যালবুমিন
যে রােগে বা কারণে দেখা যায়
1. ডায়াবেটিস মেলিটাস
2. জন্ডিস
3. অনশন, ডায়াবেটিস মেলিটাস
4. অত্যধিক প্রােটিন খাদ্য গ্রহণ, অত্যধিক শ্ৰমযুক্ত কাজ, নেফ্রাইটিস।
মূত্রে তার উপস্থিতিকে যা বলা হয়
1. গ্লাইকোসুরিয়া
2. বিলিরুবিনুরিয়া।
3. কিটোনুরিয়া অ্যালবুমিনিউরিয়া
1.মূত্রে ইউরােক্রোম (urochrome) নামক রঞ্জক থাকায় মুত্রের রং হালকা হলুদ।
2.ফুস্ফুস ঘন্টায় প্রায় 18 লিটার CO2 এবং 300-400 মিলিলিটার HQ2 বাম্পাকারে ত্যাগ করে।
উদ্ভিদ রেচন ও প্রাণী রেচনের পার্থক্যঃ-
বিষয়ঃ-
1. রেচন অঙ্গ, 2. রেচন বস্তু, 3. সঞ্চয়, 4 ব্যবহার,
উদ্ভিদ রেচনঃ-
1. উদ্ভিদের নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ থাকে না।
2. উদ্ভিদের বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কম হওয়ায় রেচন বস্তু বিশেষত নাইট্রোজেনঘটিত রেচন বস্তুর উৎপাদনের পরিমাণ কম।
3. উদ্ভিদরা বেশিরভাগ রেচন বস্তুকে কেলাস বা কোলয়েড রপে দেহের কলাকোশে জমা রাখে।
4. উদ্ভিদরা তাদের রেচন পদার্থগুলিকে পুনরায় ব্যবহার করতে পারে।
প্রাণী রেচনঃ-
1. প্রাণীদের নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গা থাকে।
2. প্রাণীদের নাইট্রোজেনঘটিত রেচন পদার্থের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে বেশি।
3. প্রাণীরা সাধারণত রেচন বস্তু দেহ থেকে বিশেষ কৌশলে নির্গত করে।
4. প্রাণীরা তাদের রেচন পদার্থগুলি ব্যবহার করে না।
উদ্ভিদ রেচন ও প্রাণী রেচনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাঃ-
রেচন হল একপ্রকার অপচিতি বিপাক। রেচনের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের ক্ষতিকারক রেচন পদার্থগুলি অপসারিত হয়। প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদের দেহে উৎপন্ন রেচন পদার্থগুলি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বর্জনীয় হলেও প্রাণী দ্বারা সেগুলি গৃহীত হয়। যেমন—গঁদ, রজন, রবার, ট্যানিন, উপক্ষার প্রভৃতি উদ্ভিদ রেচন পদার্থগুলি মানুষের জীবনে বিভিন্ন প্রয়ােজনে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে প্রাণীদের দ্বারা রেচিত রেচন পদার্থগুলি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং উদ্ভিদ রেচন ও প্রাণী রেচন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় রেচনের ভূমিকাঃ-
রেচন পদার্থ হল জীবকোশে বিপাকীয় কাজের ফলে উৎপন্ন ক্ষতিকারক, দূষিত, অপ্রয়ােজনীয় পদার্থ। জীবদেহ থেকে এগুলি অপসারিত হয়ে প্রকৃতিতে সঞ্চিত হয়। রেচন পদার্থগুলি জীবদেহের পক্ষে অপ্রয়ােজনীয়, ক্ষতিকারক হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলি প্রকৃতির জৈব ও অজৈব উপাদানের ভারসাম্য রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
1. জীবদেহ পরিত্যক্ত রেচন পদার্থগুলি প্রকৃতিতে বিয়ােজক দ্বারা বিয়ােজিত ও বিশ্লিষ্ট হয় এবং জল, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, ফসফরাস, পটাশিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন পদার্থ উৎপন্ন করে। এইসব অজৈব উপাদানগুলি মাটিতে মেশে এবং মাটিকে উর্বর করে।
2. উদ্ভিদ মাটি থেকে এইসব অজৈব উপাদান সংগ্রহ করে খাদ্য তৈরি করে এবং প্রাণীরা উদ্ভিদজাত। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এই পদার্থগুলি লাভ করে।
3. উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন ক্রিয়ায় পুনরায় এইসব জৈব ও অজৈব উপাদান মাটিতে আসে এবং চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে জীবদেহের রেচন ক্রিয়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
0 মন্তব্যসমূহ