উদ্ভিদের রেচন পদার্থের প্রকার ও অর্থকরী গুরুত্ব (Types of Excretory Products and its Economic Importance),গঁদ বা গাম (Gums) , রজন বা রেজিন (Resins) , তরুক্ষীর বাল্যাটেক্স (Latex, টনিন (Tanin),

উদ্ভিদের রেচন পদার্থের প্রকার ও অর্থকরী গুরুত্ব (Types of
Excretory Products and its Economic Importance) 

উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা—নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ, যেমন—গঁদ, রজন ও তরুক্ষীর এবং নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ, যেমন— উপক্ষার বা ক্ষারক পদার্থ বা অ্যালকালয়েড (alkaloid)। নীচে এইসব রেচন পদার্থের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল-


 (1) গঁদ বা গাম (Gums):-


উদ্ভিদ কোশের কোশপ্রাচীরের সেলুলােজ বিনষ্ট ও বিশ্লিষ্ট হয়ে যে নাইট্রোজেনবিহীন, স্বাদ ও গন্ধহীন আঠালাে সয়জাত রেচন পদার্থ সৃষ্টি করে তাকে গঁদ বলে। 


প্রকৃতিঃ-


(i) গঁদ একপ্রকারের জটিল কার্বোহাইড্রেট।

(ii) গদ কোলয়েড জাতীয় পদার্থ, যা আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে ক্ষরিত হয়।

(iii) গদ বাতাসের সংস্পর্শে শক্ত ও কেলাসিত হয়, কিন্তু জল শােষণ করে ফুলে ওঠে।


উৎসঃ-  সজিনা, শিরীষ, আমড়া, জিয়ােল, বাবলা প্রভৃতি গাছের কাণ্ডের ছালে জমা থাকে। 


উদাহরণঃ-  কপূর, বালসাম, গঁদের আঠা ইত্যাদি।


অর্থকরী গুরুত্বঃ- 


(i) গঁদ আঠারূপে বই বাঁধাই ও কাঠশিল্পে ব্যবহৃত হয় ; 

(ii) কাগজ প্রস্তুতিতে, বাড়ির দেওয়ালে চুন করার সময় ; 

(iii) ছাপার কালি, ঔষধ, প্রসাধন সামগ্রী, জল রং ইত্যাদি প্রস্তুতিতে গঁদ কাজে লাগে।


(2) রজন বা রেজিন (Resins):-


কিছু উদ্ভিদের কাণ্ড ও পাতার রজননালিতে সঞ্চিত নাইট্রোজেনবিহীন, জলে অদ্রাব্য, হালকা হলুদ রঙের সুগন্ধিযুক্ত রেচন পদার্থকে রজন বলে।


প্রকৃতিঃ-


(i) রজন জলে অদ্রাব্য কিন্তু ইথার ও অ্যালকোহলে দ্রাব্য। 

(ii) এটি অনুদ্বায়ী, শক্ত এবং ভঙ্গুর। 

(iii) রজন তিন রকমের হয়, যথা---


(a) গঁদ রজন (Gum resin):- গঁদের সঙ্গে যে রজন মিশে থাকে। ধুনা, হিং গঁদ রজন।


(b) কঠিন রজন (Hard resin):- চাঁচ গালা এই ধরনের রজন। এই প্রকার রজন অ্যালকোহলে দ্রবণীয়।


(c) ওলিও রজন (Oleo resin):- এই প্রকার রজন তরল। তাৰ্পিন এই প্রকারের রজন।


উৎসঃ-


(i) শাল গাছের ছালে ধুনা (গঁদ রজন) পাওয়া যায়। 

(ii)পাইন গাছের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা ও পাতার রজন

নালিতে রজন জমা থাকে।


উদাহরণঃ-  ধুনা, হিং, তাৰ্পিন তেল, চাচ গালা ইত্যাদি রজনের উদাহরণ।


অর্থকরী গুরুত্বঃ-

(i)  কঠিন রজন অর্থাৎ গালা কাঠের পালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

(ii)ওলিও রজন তাৰ্পিন কাঠ বার্নিশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

(iii) গঁদ রজন ধুনা পূজা-পার্বণে ব্যবহৃত হয়।

(iv) হিং রন্ধন ও ভেষজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। 


(3) তরুক্ষীর বাল্যাটেক্স (Latex):-

কতিপয় উদ্ভিদের কাণ্ড, পাতা ইত্যাদির ক্ষীরকলাতে 
যে নাইট্রোজেনবিহীন দিয়ে ক্ষরিত হয় তাকে তরুক্ষীর
বলে। অবদ্রব সঞ্চিত থাকে এবং উদ্ভিদের আঘাতপ্রাপ্ত
স্থান।


প্রকৃতিঃ-


(i) তরুক্ষীর প্রােটিন, গঁদ, রজন, উপক্ষার প্রভৃতি বস্তুর জলীয় মিশ্রণ । 

(ii) হরক্ষীর উদ্ভিদের ক্ষীরনালিতে (lacticifarous duct) বা ক্ষীরকোশে জমা থাকে।

(iii) তরুক্ষীর দুধের মতাে সাদা (বট, আকন্দ, কাঁঠাল)

বা সাদা জলের মতাে (কলা, তামাক) বা হলুদ (শিয়ালকাঁটা, আফিং) রঙের হয়।


 উৎসঃ-  


তিরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স রবার, বট, আকন্দ, করবী, কাঁঠাল, পেঁপে, মনসা, কলা, শিয়ালকাটা প্রভৃতি গাছের ক্ষীর কোশ বা ক্ষীর নালিতে জমা থাকে।


উদাহরণঃ- বট, পেঁপে, রবার প্রভৃতি আঠা তরুক্ষীরের উদাহরণ।


অর্থকরী গুরুত্বঃ-  


(i) পেঁপে গাছের প্যাপাইন মাংস তথা প্রােটিন পরিপাকে সাহায্য করে। 

(ii) ফাইকাস ইলাস্টিকা, হিবিয়া ব্রাসিলিয়েনসিস (Heveabrasilienszs) ইত্যাদির তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়। এ ছাড়া জলরােধক বস্তু হিসেবে, ইলেকট্রিক তারের ইনসুলেটররূপে তরুক্ষীর ব্যবহৃত হয়। 

(iii) ব্রোসিমাম গ্যালাকটোডেনড্রন গাছের তরুক্ষীর ভেনিজুয়েলায় দুধের বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

(iv) সাইকেল ও গাড়ির টায়ার ও টিউব তৈরি করতে; বর্ষাতি, জুতাে ইত্যাদি তৈরিতে তরুক্ষীর ব্যবহৃত হয়।


(4) উপক্ষার বা অ্যালকালয়েড (Alkaloid);-


উদ্ভিদের নাইট্রোজেনঘটিত রেচন পদার্থগুলিকে একত্রে উপক্ষার বা অ্যালকালয়েড বলে। উপক্ষার এক রকমের কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত জৈব যৌগ। প্রােটিন বিপাকের ফলে উদ্ভিদদেহে উপক্ষার সৃষ্টি হয় এবং মূল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও বীজে

সঞ্চিত থাকে। অধিকাংশ উপক্ষার জলে অদ্রাব্য, কিন্তু কোহলে দ্রাব্য। উপক্ষার স্বাদে তেতাে বা কষা হয়। কিছু কিছু উপক্ষার ভেষজগুণ সম্পন্ন হয়। ছকে উদ্ভিদের উপক্ষারগুলির উৎস ও অর্থকরী এ গুরুত্ব দেখানাে হল—


উপক্ষারঃ-                                       

(i) কুইনাইন 

(ii) ডাটুরিন

(iii) নিকোটিন

(iv) স্ট্রিকনিন

(v) মরফিন

(vi) ক্যাফিন

(vii) অ্যাট্রোপিন


উৎসঃ-


(i)সিঙ্কোনা গাছের ছাল।

(ii)ধুতরাে গাছের পাতা ও ফলে।

(iii) সর্পগন্ধা গাছের মূলে।

(iv) তামাক গাছের মূলে ।

(v) নাক্সভোমিকা গাছের বীজে।

(vi) আফিং গাছের কাচা ফলের। 

(vii) কফি গাছের বীজে। 


অর্থকরী গুরুত্বঃ-


(i) ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরি হয়। 

(ii) হাঁপানি উপশমকারী ওষুধ তৈরি হয়।

(iii) উচ্চ রক্তচাপ কমানাের ওষুধ তৈরি হয়।

(iv) মাদক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

(v) পেটের পীড়া উপশমকারী ওষুধ তৈরি হয়।

(vi) ব্যথা-বেদনা উপশমকারী ওষধ তৈরি হয়।

(vii) এর থেকে উৎপন্ন ওষুধ তারারন্ধ্র প্রসারণে,

রক্তচাপ বৃদ্ধিতে এবং স্নায়ুকে উজ্জীবিত করতে

ব্যবহার করা হয়। 

টনিন (Tanin):-

এটি উদ্ভিদের একপ্রকার তিক্ত কার্বনযুক্ত রেচন পদার্থ, যা উদ্ভিদের কালপ্রাচীরে, কোলেনকাইমা কোশে এবং কাষ্ঠল অংশে জমা হয়। ট্যানিন চা গাছের পাতায়, হরিতকী, বয়ড়া, তেঁতুল ইত্যাদির ফলে থাকে। কালি প্রস্তুতিতে এবং চামড়াকে পাকা করার জন্য ট্যানিন ব্যবহৃত হয়।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ