চর্যাপদ কি। পাল যুগের শিল্প স্থাপত্য আলোচনা করো। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। হিউয়েন সাং সম্বন্ধে আলোচনা করো?

চর্যাপদ কি। পাল যুগের শিল্প স্থাপত্য আলোচনা করো। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।  হিউয়েন সাং সম্বন্ধে আলোচনা করো?

প্রশ্ন ঃ গুপ্ত যুগের সাহিত্য আলোচনা করো?


উত্তর ঃ গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিসেন এলাহাবাদ প্রশস্তি নামে পরিচিত ‘সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কিত প্রশস্তি’ কে রচনা করেন। মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত' ‘শকুন্তলা’’ মালবিকাগ্নিমিএ’ ‘ রঘুবংশ’ ইত্যাদি কাব্যনাটক রচনা করেন। কবি বিশ্বের দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। এই যুগের আর একজন বিখ্যাত কবি ভারবি। নাট্যকার শূদ্রক মৃচ্ছকটিক নাটকে উজ্জয়িনীর সমাজ জীবন বর্ণনা করিয়াছেন। বিশাখ দত্ত রচিত মুদ্রারাক্ষস নাটকের উজ্জয়িনীর সমাজজীবন বর্ণনা করিয়াছেন। বিশাখ দত্ত রচিত মুদ্রারাক্ষস নাটকের কাহিনী হইল নন্দবংশ ধ্বংসের জন্য কৌটিল্যের কূটনীতি।

গুপ্ত যুগের কয়েকটি পুরান গ্রন্থ রচিত হয়। ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের বর্তমান রূপ গুপ্ত যুগের সংকলিত হয়।


প্রশ্ন ঃ গুপ্ত যুগের শিল্প রীতি আলোচনা করো?


উত্তর ঃ গুপ্ত যুগের শিল্প রীতি বিরুদ্ধ ভারতীয় শিল্পধারার নিদর্শন। গন্ধার শিল্পধারা গ্রিক শিল্পরীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। কিন্তু গুপ্ত শিল্পধারা ছিল বৈদেশিক প্রভাবমুক্ত। অজন্তা গুহা চরিত্রের অধিকাংশ-ই গুপ্তযুগে অংকিত  মধ্যপ্রদেশের বাঘ গুহা চিত্র এবং শ্রীলংকার সিরিয়ার গুহাচিত্র অজন্তা চিত্রকলা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। প্রধানত যুদ্ধ ও জাতকের কাহিনী অবলম্বন করিয়া অজন্তার গুহাচিত্র গুলি অঙ্কিত হয়।


চিত্রকলার মত ভাস্কর্যশিল্পে ও গুপ্ত যুগের অবদান অবিস্মরণীয়। গুপ্ত যুগের বুদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য দেবদেবীর মূর্তি গুলির আবেদন অসাধারণ। ঈষৎ গোলাকার মুখমন্ডল সব দেহি মূর্তিগুলি অন্তত প্রাণবন্ত। মূর্তি গুলিতে শিল্প সংযম ও ভাবে তার অপূর্ব মিশ্রণ ঘটিয়ে আছে।


গুপ্ত যুগের সুন্দর সুবর্ণ মুদ্রাগুলি ও গুপ্ত যুগের শিল্পের অন্তর্ভুক্ত । এইসব মুদ্রা পৃথিবীর ঐশ্বর্যশালী ও সম্পদশালী সম্রাটদের মুদ্রার মধ্য উজ্জ্বল স্থান অধিকার করে।


প্রশ্ন ঃ টীকা লেখ চন্দ্ররাজার লৌহস্তন্ভ?


উত্তর ঃ দিল্লির কুতুবমিনার এর নিকট রক্ষিত চন্দ্র রাজার লৌহ স্তম্ভ গুপ্ত যুগের ধাতু বিদ্যুৎ কার্যের একটি নিদর্শন। স্তম্ভটি 7 মিটার উঁচু এবং উত্তম বডির ওজন প্রায় 6000 কিলোগ্রাম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরিয়া রৌদ্র ও জলের মধ্যে থাকলেও লৌহ স্তম্ভ টি তে কিছুমাত্র মরিচা ধরে নাই। আধুনিক ভারতীয় খুব কম কারখানাতেই এত বড় লৌহ স্তম্ভ ঢালাই এর ব্যবস্থা আছে।


প্রশ্ন ঃ বৃহত্তর ভারত সম্পর্কে কি জানো?


উত্তর ঃ সুদূর অতীতকাল এই ভারতের সঙ্গে মধ্য এশিয়া পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সিংহল প্রভৃতি রাজ্যের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ ছিল ধর্ম ও বাণিজ্য। ভারতের বৌদ্ধধর্ম মধ্য এশিয়া সিংহল ও তিব্বত গ্রহণ করিয়া ছিল । পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্ম ও হিন্দুধর্ম প্রচারিত হয়েছিল। ভারতীয় বণিক গণ এই সব দেশের বাণিজ্য উপলক্ষে যাতায়াত করি তো। ভারতীয় ধর্মপ্রচারক এবং ভারতীয় বণিকদের প্রভাবে মধ্য এশিয়া পূর্ব এশিয়া সিংহল তিব্বত জুড়িয়া গড়িয়া উঠিয়াছিল বৃহত্তর ভারত।


বৃহত্তর ভারতের বিভিন্ন দেশের ভারতীয় ভাষা লিপির সাহিত্য ধর্ম ও সংস্কৃতি ছড়াইয়া পরে। বিভিন্ন প্রান্তে গড়িয়া ওঠে ভারতীয়দের রাজার ও বাসস্থান আজ ওইসব দেশে ভারতীয় শিল্পকলার স্থাপত্য ভাস্কর্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে বড় প্রমাণ পাওয়া যায়। মধ্য এশিয়ার তাকলামাকান মরুভূমি খনন করিয়া মুহূর্ত স্তৃপ ও বিহার বৌদ্ধ ও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভারতীয় ভাষা ও লিপিতে লেখা ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই অঞ্চল সম্পর্কে তথ্য স্টার পরের স্টাইল বলেন যে অঞ্চলটি দেখার সময় তার মনে হয়েছিল যে তিনি যেন প্রাচীন ভারতে একটি নগরে গুড়িয়া বেড়াইতেছেন।


প্রশ্ন ঃ টীকা লিখ অশোকের অনুশাসন।


উত্তর ঃ মৌর্য সম্রাট অশোকের অনুশাসন শিলালিপি ও স্তম্ভ লিপিতে উত্তীর্ণ হইয়া আছে। অনুশাসন গুলি হইতে অশোক যুগের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি ধর্ম ও রাজ কর্তব্য সম্বন্ধে অশোকের অভিমত জনসাধারণের প্রতি সম্রাটের উপদেশ ইত্যাদি জানা যায়। অশোকের অনুশাসন মৌর্য যুগের ইতিহাস জানিবার এক অমূল্য সূত্র।

শিলালিপি ও স্তম্ব লিপি অধিকাংশই ব্রাম্ভি অক্ষরে লিখিত। ব্রাহ্মী লিপি হইতে দেবনাগরী বাংলা গুজরাটি প্রভৃতি লিপির উৎপত্তি হয়েছে। অশোকের সাম্রাজ্যের উত্তর ও পশ্চিম দিকে বর্তমান পাকিস্তানের প্রাপ্ত কয়েকটি লিপি খরোষ্ঠী তে লিখিত। হায়দ্রাবাদে খুশকি গ্রামে একটি শিলালিপি হইতে জেমস প্রিন্সেস সর্বপ্রথম অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেন।


প্রশ্ন ঃ হিউয়েন সাং সম্বন্ধে আলোচনা করো?


উত্তর ঃ চৈনিক বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ 600 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া ছিলেন। 20 বছর বয়সে এশিয়ান বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর জীবন আরম্ভ করেন। 629 খ্রিস্টাব্দ হিউয়েন সাঙ বৌদ্ধধর্ম অনুশীলনের জন্য ভারত যাত্রা করেন। তিনি ভারত সম্পর্কে তাহার অভিজ্ঞতা পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেন। এই পুস্তকের নাম তাঙসিয়ুকি।


হিউয়েন সাঙ এর বিবরণ হয়েছে জানা যায় যে ভারত কৃষি ও খনিজ পদার্থের পরিপূর্ণ ছিল। ভারতীয়দের সাধারণ খাদ্য ছিল সংস দুগ্ধ জি সিনেমা চুরি ইত্যাদি। মাঝের মধ্য ভারতীয় গান মাছ মাংস আহার করি তো। গৃহস্থ ঘরে সাধারণ মাটির বাসনপত্র ব্যবহার করা হইত কিছু কিছু পিতলের বাসন ও ছিল অসুস্থ ব্যক্তিগণ তামার চামচ ব্যবহার করিতো।


ব্যবসা-বাণিজ্যের বিনিময়ের মাধ্যমে হিসাবে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ছোট মুক্তা এবং করি প্রচলিত ছিল। সামুদ্রিক বন্দর গুলি মূল্যবান পণ্যবোঝাই থাকিত ভারতীয়দের নৈতিক বোধ ছিল প্রখর। সম্রাট হর্ষবর্ধন হিউয়েন সাঙের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। টেনশন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক বছর অবস্থান করিয়া সংস্কৃত ভাষা ও বৌদ্ধ শাস্ত্র শিক্ষা লাভ করেন। 685 খ্রিস্টাব্দে হাসান চিনে প্রত্যাবর্তন করেন।


প্রশ্ন ঃ চর্যাপদ কি?


উত্তর ঃ চর্যাপদ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ ঋত্বিক রচিত ধর্মসাধনার গান। পাল যুগে রচিত এই গানগুলি দেশীয় সাহিত্য বা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। বৌদ্ধ সহজ-সাধারণ রহস্য প্রকাশ করিবার জন্য গানগুলি রচিত হয়েছিল। চর্যাপদের কয়েকটি শব্দ আজিও বাংলা ভাষার প্রচলিত। চাষাবাদের প্রভাবে পরবর্তীকালে বাংলার সহজিয়া শাক্ত বাউল ও বৈষ্ণব পদাবলীর সৃষ্টি হয়। মহামহোপাধ্যায় এর প্রাসাদ শাস্ত্রী নেপাল হইতে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।


প্রশ্ন ঃ পাল যুগের শিল্প স্থাপত্য আলোচনা করো?


উত্তর ঃ পাল যুগে বাঙালির মনীষা শিল্প স্থাপত্য কীর্তির মধ্য দিয়া সুন্দর ভাবে প্রকাশ পাইয়াছে। বাঙালির শিল্পীগণ প্রধানত অষ্টধাতু ও কষ্টি পাথর দ্বারা মূর্তি নির্মাণ করেছেন। পাল যুগের চিত্রশিল্প প্রচলিত ছিল। বিমান বিটপাল কোন ভদ্র বিমল দাস প্রাচীন বাংলার বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন। স্তুপ বিহার এবং মন্দিরের মধ্যে পাল যুগের স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। পাল যুগের স্থাপত্যের মধ্য পাহাড়পুরের নাম বিশেষ উল্লেখ যোগ্য।


প্রশ্ন ঃ টীকা লেখ অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।


উত্তর ঃ অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পাল রাজত্বকাল এর একটি স্মরণীয় নাম দীপঙ্কর বিক্রমশীল মহাবিহার এর অধ্যক্ষ ছিলেন। তিব্বতের রাজার বরংবার আমন্ত্রণ প্রার্থনায় দীপঙ্কর তিব্বতে যান এবং সেখানে মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।

দীপঙ্কর 13 বছর তিব্বতে ছিলেন। 1035 খ্রিস্টাব্দে 73 বছর বয়সে তিব্বতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান এর তিব্বত যাত্রাকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের মধ্য এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। এইসব অঞ্চল ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তাদের দ্বারা অধিকৃত হয়। ধর্মরক্ষার জন্য মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধগণ ভারতের বিহার গুলিতে আশ্রয় সন্ধান করিতেছিলেন। বঙ্গদেশ ছিল ভারতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শেষ আশ্রয়স্থল। বৌদ্ধ ধর্মের এই বিপদের জন্য দীপঙ্কর প্রথমে দেশত্যাগ শিক্ষিত হন নাই। কিন্তু পরে মদ পরিবর্তন করিয়া তিব্বত যাত্রা করেন।


দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান কৃতিত্ব বালরাজ নোয়াপ আলোকে লিখিত পত্রের তিব্বতি অনুবাদ তিব্বতি গ্রন্থ তুন তঞ্জুরে রক্ষিত আছে দেবত্ববিদ ওয়াভেলএল এর মত অনুসারে অতিশ 980 খ্রিস্টাব্দে গৌর রাজ বংশে বঙ্গদেশের বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ