কবীর
কবীর আরবি শব্দ। কবীর অর্থ মহান। মহাত্মা কবীরের জন্ম রহস্যাবৃত। ছেলে বেলায় তিনি জোলা পরিবারে পুত্রস্নেহে প্রতিপালিত হইয়াছিলেন। দোঁহা ও ভজনের মধ্য দিয়া কবীর হিন্দু মুসলমান মিলের বাণী প্রচার করিয়া ছিলেন। ২ পংতির কবিতাগুচ্ছকে বলা হয়। কবীর সহজ হিন্দি ভাষায় অনেক দোঁহা রচনা করেন। কবীর ঋত্বিক রচিত দোঁহা হিন্দি সাহিত্যের সম্পদ।
সুমন বয় ধর্ম প্রচার করিয়া কবীর বলিয়াছেন -----
অলক ইলাহি এক হ্যায় নাম ধারায়া ধোয়া।
রাম রহিম এক হ্যায় নাম ধারায়া ধোয়।
কৃষ্ণ করিমা এক হ্যায় নাম ধরায়া ধোয়।
কাশি কাবা এক হ্যায় ঐক্য রাম রহিম।
ময়দা এক পগবান বহু বৈঠী কবিরা জিম।
(অলখ-আল্লা,রাম-রহিম, কৃষ্ণ-করিম,কাশী-কাবা এক, শুধু দুই নাম।যেমন একই পাকাইয়া নানা খাদ্য বস্ত পস্তূত করা হয়, তেমন একি ঈশ্বর নানা সাজে করেন।)
কবিরের অনুগামীগন ‘কবীরপন্থী’ নামে পরিচিত। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকই কবীর এর বিশেষত্ব গ্রহণ করেছিল। কবিরের দেহত্যাগের পর তাহার স্মৃতিচিহ্ন হিন্দুগণ বারাণসীর কবীর চওড়া নামক স্থানে এবং মুসলমানগন মোহরের দরগায় সমাধি দেয়। কবীর চতুর্দশ শতাব্দীর শেষভাগে অথবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
চৈতন্যদেব
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফাল্গুনী পূর্ণিমা নবদ্বীপে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের জন্ম হয়। চৈতন্যদেবের পিতার নাম জগন্নাথ মিশ্র মাতার নামঃ শচীদেবী। চৈতন্যদেব কৃষ্ণ নামের মধ্য দিয়া জাতি ধর্ম নিরবিশেষে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করিয়া ছিলেন। মুসলমানগন তাঁহার ধর্ম মতের প্রতি অনুরাগী হইয়াছিল। চৈতন্যদেবের শিষ্যদের মধ্যে হরিদাস বিখ্যাত। হরিদাস মুসলমান ছিলেন। যবন হরিদাস নামে তিনি পরিচিত হইয়াছিলেন। হিন্দু সমাজে তখন নানা অনাচার দেখা দিয়েছিল। চৈতন্যদেবের প্রেম ধর্মে হিন্দুগণ বিশেষত্ব হিন্দু সমাজের নিম্ন শ্রেণীর তাহার প্রতি আকৃষ্ট হয়। চৈতন্যদেবের ধর্ম হিন্দু মুসলমান ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের ধর্ম ছিল।
বাংলায় সুলতান হুসেন শাহের রাজত্বকালে চৈতন্য দেবের আবির্ভাব হয়। সুলতানি আমলে বাংলার স্বাধীন ছিল বটে কিন্তু ভারতের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ হারাইয়া ফেলিয়াছিল। চৈতন্যদেব বাংলার বিচ্ছিন্নতা দূর করিয়া * আয় ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার যোগ স্থাপন করেন। চৈতন্যদেবের পূর্ণ জীবনী অবলম্বন করিয়া বাংলা ভাষায় জীবনী কাব্য লেখা আরম্ভ হয়। বাংলা সাহিত্যের এই নতুনত্ব চৈতন্য দেবের আবির্ভাব এর পরোক্ষ ফল। চৈতন্যদেবের পুরীতে কৃষ্ণ দ্যোরিক ৪৮ বছর বয়সে দেহ রক্ষা করেন।
নানক
নানক ছিলেন ঐক্যের সাধক। ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে লোহার এর প্রায় ৪০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিম দিকের বান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তালুবন্দি গ্রামের বর্তমান নাম নানকানা জায়গাটি পাকিস্তানের অন্তর্গত। নানক গীতা উপনিষদ কোরআন হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম শাস্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি কবিরের ভক্তিবাদ দ্বারাও প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। নানক ঈশ্বর লাভের জন্য ভক্তিবাদ ও নামমার্ক প্রচার করেন। নানক সমবেদনার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করিয়াছিলেন। নানকের প্রবর্তিত ধর্ম বের হওয়ার আচার অনুষ্ঠানের স্থান ছিল না। নানক শিখ ধর্মের প্রবর্তক। শিখ ধর্মের গুরুর স্থান খুব উচ্ছে। নানক দেহত্যাগের পূর্বে তার অন্যতম শীর্ষ অঙ্গ থেকে দ্বিতীয় শিখ গুরু নির্বাচিত করেন। বহু হিন্দু-মুসলমান নানককে গুরু পদে বরণ করিয়াছিল। নানকের উপদেশাবলী গ্রন্থসাহেব (শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ) গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
বল্লভাচার্য
১৪৭১ খ্রিস্টাব্দে বল্লভাচার্য কাশিতে জন্মগ্রহণ করেন। বল্লভাচার্য ছিলেন অন্ধ দেশীয় ব্রাহ্মণ। কাশিতে শিক্ষা লাভের পর বল্লভাচার্য বিজয়নগরের রাজসভা অলংকৃত করেন। এই সময় বিজয়নগরের রাজা ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়। বল্লভাচার্য ধর্মমত শ্রদ্ধা দ্বৈতবাদ নামে খ্যাত। বল্লভাচার্য আচার্য শঙ্কর এর অদ্বৈতবাদ গ্রহণ করলেও ভক্তিবাদের ভিত্তিতে অদ্বৈতবাদ ব্যাখ্যা করেন। শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে নিজের আত্মাকে সমর্পণ ভট্টাচার্যের ধর্মচিন্তার মূল কথা।
রামদাস
রামদাস ছিলেন ছত্রপতি শিবাজীর গুরু। একনাথ তুকারাম রাম দাস প্রমুখ ধর্ম সংস্কারক জাতিভেদ অস্বীকার করেন ও সকল মানুষ সমান এই তথ্য প্রচার করেন। রামদাস মোট নিবাসী শিষ্যদের সাহায্যে সমাজ সংস্কার আন্দোলন করেন। মারাঠা গান রামদাসের শিক্ষায় জাতীয়ভাবে উদ্দীপ্ত হয়। রামদাস কর্তৃক লিখিত দাসবোধ একটি বিখ্যাত গ্রন্থ। রামদাসের ধর্ম আন্দোলন মহারাষ্ট্রীয় জীবনের নব প্রাণ সঞ্চার করিয়াছিল। রামদাস এর আবির্ভাব কাল ১৬২৬ হইতে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দ।
প্রশ্ন ঃ আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ফল কি হয়েছিল?
উত্তর ঃ দাক্ষিণাত্যে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন শিবাজী। শিবাজী কে দমন করার জন্য আওরঙ্গজেব স্বয়ং দাক্ষিণাত্যে আগমন করেন। আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের দুটি মুসলিম রাজ্য বিজাপুর গোলকুণ্ডা জয় করিয়া মুঘল সাম্রাজ্য ভুক্ত করেন।
বিজাপুর এবং গোলকুণ্ডা মূলক সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ার ফলে শিবাজী কে বাধা দেওয়ার জন্য কোন স্থানীয় মুসলিম শক্তি ছিলনা। এদিকে শিবাজীর রণকৌশলের ফলে আওরঙ্গজেবের পক্ষে শিবাজীকে পড়া ভুক্ত করা সম্ভব হয় নাই। বস্তু ত পক্ষে জীবনের শেষ ২৫ বছর আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের অবস্থান করিতে হয় এবং দাক্ষিণাত্যের তাহার জিবনাবসন হয়। দাক্ষিণাত্য নীতির ফলে আওরঙ্গজেবকে সুদীর্ঘকাল উত্তর ভারত হইতে অনুপস্থিত থাকিতে হইয়াছিল। ইহার ফলে উত্তর ভারতের রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থায় বিশৃংখলা দেখা দেয় যাহার চরম পরিনিতি ছিল মোঘল সাম্রাজ্যের দ্রুত পতন।
প্রশ্ন ঃ শিক্ষণ কোন সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়?
উত্তর ঃ আওরঙ্গজেব শিখদের নবম গুরু তেজ বাহাদুর কে প্রাণদণ্ড দেন। ট্যাগ বাহাদুরকে হত্তা সিকদের গভীরভাবে বিচলিত করে। তাহারা তেগ বাহাদুর এর পুত্র এবং শিখদের দশম গুরু গুরু গোবিন্দ সিং এর নেতৃত্বে মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সামরিক গঠন গড়িয়া তোলে।
প্রশ্ন ঃ দুর্গ ভাষার উৎপত্তি কিভাবে হয়?
উত্তর ঃ ‘দুর্গ’ শব্দের অর্থ শিবির। মুঘল সামরিক শিবিরে সৈন্যগণ ফরাসি ও হিন্দি ভাষার নিশিত শব্দ ব্যবহার করিতো। ফরাসি ও হিন্দি ভাষার এই মিশনের ফলে দুর্গ ভাষার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে উচ্চ একটি সম্পদশালী ভাষাতে পরিণত হইয়াছে। প্রসিদ্ধ কবি আমির খসরু দুর্বাসার অভিশাপ সাহিত্য রচনা করিয়াছেন।
0 মন্তব্যসমূহ