ভূমিকা (Introduction): -
পৃথিবীতে ভূমিরূপ গঠনে দুটি প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল। একটি অন্তর্জাত এবং অন্যটি বহির্জাত। আন্তর্জাত শক্তি (ভূ - আলোড়ন) পৃথিবীতে যে সকল প্রাথমিক ভূমিরূপ গড়ে তোলে ( পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি প্রভৃতি), বহির্জাত শক্তিসমূহ ( ক্ষয় ,বহন ও অবক্ষেপণ পদ্ধতির দ্বারা) সেগুলিকে পুনর্গঠন করে নতুন দ্বিতীয় শ্রেণীর ভূমিরূপ তৈরি করে। প্রধান প্রধান ভূ -গঠনকারী শক্তিগুলি হল-- নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল ইত্যাদি। এই শক্তিসমূহ ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী এজেন্ট বা মাধ্যম রূপে পরিচিত।
বহির্জাত প্রক্রিয়াঃ-
১) অবরোহন, ২) , ৩) জবিক প্রক্রিয়া,
১) অবরোহনঃ-
১) আভবিকার, ২) পুঞ্জিত ক্ষয়, ৩) ক্ষয়ীভবন
ক্ষয়ীভবনঃ-
নদীর কার্য, b) হিমবাহের কার্য, c) বায়ুর কার্য, d) ভৌম জলের কার্য, e) তরঙ্গের কার্য
২) আরোহনঃ-
নদীর দ্বারা সঞ্চয়, b) হিমাবাহের দ্বারা সঞ্চয়, c) বায়ুর দ্বারা সঞ্চয়, d) ভৌমজলের ধারা সঞ্চয়, d) সমুদ্রতরঙ্গ ও স্রোতের দ্বারা সঞ্চয় ।
৩) জৈবিক প্রক্রিয়াঃ-
ক্ষয়, b) মানুষ উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা ক্ষয়, c) মানুষ উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা সঞ্চয়।
সুদীর্ঘকাল ধরে বহির্জাত শক্তি শিলাস্তরের উপর আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন ঘটায়। ফলে ওপরের শিলাস্তর অপসৃত হয় ও নীচের শিলাস্তর উন্মুক্ত হয়। একে নগ্নীভবন বলে। ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহ বিভিন্ন স্থানে সঞ্চিত হয়। এক কথায়, ভূপৃষ্ঠের উপর উপপৃষ্ঠীয় অংশে বাইরের শক্তিসমূহ যে যে পদ্ধতিতে নগ্নীভবন ঘটায়, তাদের বহির্জাত প্রক্রিয়া বলা হয়। ‘নদী প্রবাহ’ সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী বহির্জাত শক্তি ।
বৈশিষ্ট্যঃ-
১) এটি ধীর প্রক্রিয়া ।
২) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া ও সৃষ্ট বিভিন্ন বিভাগে বহির্জাত শক্তি গুলো ছোট ছোট ছোট ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। যেমন--- পার্বত্য অঞ্চলে নদী সৃষ্টি করে ‘I’ ও ‘V’ আকৃতির উপত্যাকা, শইলাসোপান, জলপ্রপাত, প্রপাতকূপ, মন্থকূপ, শৃঙ্খলিত শৈলশিরা ইত্যাদি। এগুলি দ্বিতীয় শ্রেণীর ভূমিরূপ।
৩) তিনটি মূল পদ্ধতিতে বহির্জাত শক্তিগুলি কাজ করে ।
যেমন ---
(ক) অবরোহন পদ্ধতির মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায় ।
(খ) পদ্ধতি বা আমি সঞ্চয়ের মাধ্যমে উচ্চতা বৃদ্ধি ও
(গ) জৈবিক পদ্ধতি বা উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের দ্বার ক্ষয় সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
নদীর কাজঃ- যেসব কোন প্রাকৃতিক শক্তি ভূমিরূপ পরিবর্তনে অংশ নেয়, নদী তাদের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর মোট ভূভাগের প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চল নদী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন সাধন করে চলেছে।
নদীর সংজ্ঞাঃ- যেসব স্বাভাবিক জলধারা তুষার গলা জল বা বৃষ্টির জলে পুষ্ট হয়ে বা প্রস্রবণ থেকে উৎপণ্য হয়ে ভূমির ঢাল অনুসারে উচ্চভূমি থেকে বহুদূর প্রবাহিত হয়ার পর সাগর, হ্রদ বা অন্য কোন জলধারায় এসে মিলিত হয়, তাকে নদী বলে।
নদী আবহবিকা ও ধারণ আবহবিকাঃ- কোন প্রধান নদী ও তার উপনদী-শাখানদী তো হয়েছে জায়গাটুকু অধিকার করে আছে আর তার যতটুকু অঞ্চলের নদী তার বিভিন্ন কাজ করে চলেছে, তাকে নদী আবহবিকা বলা হয়। পার্বত্য জলে নদী যতটুকু জায়গা অধিকার করে থাকে তাকে ধারণ অববাহিকা বলে।
উপনদী ও শাখা নদীঃ- যে নদী কোন উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কোনো বড়ো নদীতে এসে মিশে তাকে উপনদী বলে এবং কোনো নদী বড়ো নদী থেকে বেরিয়ে সাগর, হ্রদ বা অন্য কোনো নদীতে এসে পড়ে তাকে শাখা নদী বলে।
নদী উপত্যকাঃ- ন্দীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীখাতের উভয়দিকের উচ্চভূমি মধ্যে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ নিন্মভূমিকে উপত্যাকা বলে।
ক্ষয়ের শেষ সীমা (Base level of Erosion) :- নদীর নিন্মক্ষয়ের শেষ সীমাকে সাধারণত ক্ষয়ের শেষ সীমা ধরা হয়। সাধারণত সমুদ্রতলই নদী ক্ষয়ের শেষ সীমা।
0 মন্তব্যসমূহ